বিসিকের নতুন ৫ শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ নিতে উদ্যোক্তাদের অনীহা

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : বণিক বার্তা

সারা দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর সংখ্যা ৮২। এর মধ্যে কভিড-১৯ অতিমারীর পর নতুন আটটি শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়। তবে নানা সংকটের কারণে পাঁচটি শিল্পনগরীর বেশির ভাগ প্লটই বরাদ্দহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মূলত চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শিল্পনগরীতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের মাঝে অনীহা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিসিকের সারা দেশে শিল্প প্লটের সংখ্যা ১২ হাজার ৩১১। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৪টি প্লটই খালি পড়ে রয়েছে। বরাদ্দহীন প্লটগুলোর মধ্যে ৭৩ শতাংশ বা ৭৯২টি প্লটই ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্থাপন করা হয়।  

করোনাকালীন সংকটের পর গত কয়েক বছর দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সীমিত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত এক বছর দেশের রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।  

বিসিকের মহাব্যবস্থাপক (শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখা) রব্বানী তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত শিল্পনগরী স্থাপন ও প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। গত কয়েক বছরে নতুন স্থাপিত শিল্পনগরীগুলোয় প্লট বরাদ্দে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়নি।’

সম্প্রতি বিসিকের খালি প্লটগুলো বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বড় উদ্যোক্তারা একসঙ্গে একাধিক প্লট নেয়ার আবেদন করেছে। তবে বিসিক সব সময়ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দিতে আগ্রহী। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে খালি প্লটের সংখ্যা কমে আসবে।’

বিসিকের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে অবস্থিত বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী। ২০২১ সালে স্থাপিত বিশেষায়িত এ শিল্পনগরীর ৩৬১টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২০টি। অর্থাৎ ৩৪১টি প্লটই খালি রয়ে গেছে। যদিও ১৯৯৬ সালে স্থাপিত মুন্সিগঞ্জের পুরনো বিসিক শিল্পনগরীর ৮২টি প্লটের শতভাগই উৎপাদনরত। অপরদিকে ২০২২ সালে রাজশাহী-২ বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের পর মাত্র ৪৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ২৪১টি প্লটই বরাদ্দহীন রয়ে গেছে। 

২০২১ সালে স্থাপিত গোপালগঞ্জ (সম্প্রসারণ) বিসিক শিল্পনগরীটিও সংকটে রয়েছে। এখানে ১৩৮টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৮টি। একই বছর স্থাপিত বিসিকের অপর দুই শিল্পনগরীর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা বিসিকের ৭৮টি প্লটের মধ্যে ৫৩টি এবং বরগুনা বিসিকের ৬০টি প্লটের মধ্যে ৪২টি বরাদ্দ দেয়া যায়নি। তবে ২০২৩ সালে স্থাপিত ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) বিসিকের ২৩৪টি প্লটের মধ্যে ২২৯টিই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে স্থাপিত নরসিংদী (সম্প্রসারণ) বিসিকের ১৫৭টি প্লটের মধ্যে ১৪৭টিই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ দুটি শিল্পনগরীতে দ্রুত প্লট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

বিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিল্পনগরী স্থাপনের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও অনেক ক্ষেত্রে সেটি মানা হয়নি। যেসব স্থানে প্লটের চাহিদা রয়েছে সেখানে না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় স্থানে শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে শিল্পনগরীগুলোয় খালি প্লটের সংখ্যা বেড়েছে। 

গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বিসিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারা দেশে বিসিকের ৮২টি শিল্পনগরীতে মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৫১৫ দশমিক ৮ একর। যেখানে ৬ লাখ ৩২ হাজার ১৮৯ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৮৪ জন পুরুষ ও ৩ লাখ ৯ হাজার ৫ জন নারী। বরাদ্দহীন থাকা ১ হাজার ৮৪টি প্লটে উৎপাদন শুরু করা গেলে আরো এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সবশেষ গত ৬ মার্চ সারা দেশের ২০টি শিল্পনগরীতে ১ হাজার ৩টি প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় বিসিক। তবে দেশজুড়ে চলমান নানা সংকটের কারণে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন