সর্বাত্মক যুদ্ধের পথে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ?

বণিক বার্তা ডেস্ক

শুক্রবার বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় ৩১ জন নিহত ছবি: এপি

ইসরায়েল হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। উভয় পক্ষই যুদ্ধ এড়াতে চায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনেক আগে থেকেই বলে এলেও এবারের পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়েই ভিন্ন। চলতি সপ্তাহে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণের পর থেকে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষের জন্যই উত্তেজনা প্রশমন করা কঠিন হবে।

১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে শত শত হিজবুল্লাহ সদস্যের ব্যবহৃত পেজার বিস্ফোরিত হয়। পরদিন আবারো দেশটিতে তারবিহীন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের সেই অত্যাধুনিক প্রাণঘাতী হামলাগুলো বিপুলসংখ্যক মানুষকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয় বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে উভয় হামলাই চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে দুই পক্ষের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। কারণ পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় কেবল হিজবুল্লাহ সদস্যরাই নন, বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোকও হতাহত হয়েছে।

গতকাল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ঘটনায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ ৩১ জন নিহত হন। এর পরই বাইডেন প্রশাসন অঞ্চলটিতে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা করছে।

আক্রমণগুলোকে দেখা হচ্ছে ইসরায়েলের বৃহত্তর সামরিক অভিযানের সূচনা হিসেবে, যা লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর যুদ্ধক্ষমতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ রোধে ইসরায়েল আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাইডেন প্রশাসনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সরকারি বার্তায় বলা হচ্ছে যে কূটনীতি এখনো রক্তপাত রোধ করতে পারে। ইসরায়েল জানিয়েছে যে তারা হিজবুল্লাহর ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়ে কূটনৈতিক সমাধানে আসতে চায় যাতে উত্তরের বাসিন্দারা নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে।

তবে সরকারি বার্তার সঙ্গে মিলছে না মার্কিন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বৈরুতে আরো হামলা হবে বলে ধারণা তাদের। হিজবুল্লাহর কমান্ডারদের হত্যার উদ্দেশ্যে লক্ষ্যবস্তু বানানো, অস্ত্রাগারে হামলা এবং হিজবুল্লাহর যোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর ইসরায়েল আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তাদের। হিজবুল্লাহও সেক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে বলেই তাদের মূল্যায়ন। মার্কিন এক কর্মকর্তার অনুমান, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা করতে পারে হিজবুল্লাহ।

লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে গত বছরের অক্টোবর থেকেই চলছে গুলি বিনিময়। তবে মার্কিন দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তের গুলি বিনিময় নয়, বরং অনেক বেশি উদ্বেগজনক হচ্ছে লেবানন ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে হামলার ঘটনা। কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, পরিস্থিতি এখন সেই বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছেছে যে জায়গা থেকে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ছাড়া অন্য কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না তারা। একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের রয়েছে চূড়ান্ত ভয়, যা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেও জড়িয়ে ফেলতে পারে।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারুল্লাহ গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে বলেন, ‘ইসরায়েলের পেজার ওয়াকিটকি হামলা হতে পারে যুদ্ধের ঘোষণা। শত্রুরা সব সীমারেখা (রেড লাইন) অতিক্রম করেছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে বলছেন যে তারা যুদ্ধের এক নতুন ধাপে প্রবেশ করেছেন। এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট বলেন, ‘সামরিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

চলতি সপ্তাহের ঘটনাগুলো কোনদিকে মোড় নেবে এবং কী পরিণতি ডেকে আনবে তা মার্কিন কর্মকর্তারা এখনো নিশ্চিতভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন বলে জানান মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।

গত এক বছরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহ বেশ কয়েকবারই পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে গেছে। প্রতিবারই কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র তার অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদার সংঘাতটিকে আরো প্রসারিত হওয়ার হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে। তবে ইসরায়েলের পরিকল্পনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তা পলিটিকোকে বলেন, ‘নেতানিয়াহু প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে তাদের অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ের মাত্রা বাড়াবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন