শ্রীলংকার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টায় রাজাপাকসে পরিবার

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি— বিবিসি।

শ্রীলংকার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল ২০২২ সালের ১৩ জুলাই। যখন হাজার হাজার মানুষ শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবন দখলে নিয়ে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। ওই ঘটনার মাধ্যমে দেশটির রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবারের অবসান হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আধিপত্য এবং দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজাপাকসে পরিবারের পতন ঘটেছে।

তবে এবার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার ক্ষমতায় ফেরার নতুন কৌশল খুঁজতে শুরু করেছে রাজাপাকসে পরিবার। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অন্য তিন প্রার্থী হলেন– সজিথ প্রেমাদাসা, অনুরা কুমারা দাসানায়েকে এবং রানিল বিক্রমাসিংহে।

নামালের নির্বাচনী প্রচারণায়ও তার বাবা-চাচাদের উত্তরাধিকারকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দলীয়ভাবে তারা মাহিন্দা এবং গোতাবায়া রাজাপাকসেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক চরিত্রে উপস্থাপন করছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যম বলছে— এই নির্বাচনে প্রার্থী হলেও মূলত আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনই তাদের লক্ষ্য। ৫ বছর পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির জন্যই এবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন নামাল।

তবে সাধারণ জনগণ এখনো মনে করে— রাজাপাকসে পরিবার আবার শ্রীলংকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে অতীতের মতো দুর্ভোগ ফিরে আসতে পারে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লক্ষণ সান্দারুয়ান বিবিসি সিংহলীকে বলেছেন, নামাল রাজাপাকসেকে ভোট দেয়ার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নই। রাজাপাকসে পরিবারের জন্য যে কষ্ট আমরা ভোগ করেছি, তা ভুলে যাওয়ার নয়।

২০২২ সালে শ্রীলংকার আলোচিত ওই বিক্ষোভ স্থানীয়ভাবে ‘আরাগালয়’ নামে পরিচিত। হিংহলী ভাষায় এর অর্থ— সংগ্রাম। সরকারবিরোধী এই আন্দোলনে রাজপথে নেমে টিয়ারশেল এবং জলকামানের মুখে প্রতিবাদ জানায় লাখ লাখ মানুষ। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তখনই অনুমান করা হচ্ছিল— পরিবারটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পতনের মুখে। আর এর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গোতাবায়াকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আগেই পরিবারটি যখন আবার নির্বাচনে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে— শ্রীলংকার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। 

এদিকে এরই মধ্যে গোতাবায়া রাজাপাকসেও দেশে ফিরে এসেছেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও অনেকটা নির্বিঘ্নেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবারো প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। 

শ্রীলংকার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজাপাকসে পরিবারের প্রত্যাবর্তন সম্ভব কিনা, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। জনগণের প্রতিরোধ, রাজনৈতিক সংকট এবং জাতীয় স্বার্থের চাপে ভবিষ্যতে দেশটির রাজনৈতিক গতিপথ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন