ভূমিকম্প প্রতিরোধী ইস্পাত প্রবর্তন করে একেএস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: আবুল খায়ের স্টিল

আবুল খায়ের গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বিশাল একটি শিল্পগোষ্ঠী। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের স্টিল চট্টগ্রামের মাদাম বিবিরহাটে স্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের একটিমাত্র ইউনিটে গ্যালভানাইজড স্টিল শিটের একক উৎপাদন শুরু করে। তাদের বিখ্যাত স্টিল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে গরু মার্কা ঢেউটিন, গরু মার্কা কালার কোটেড স্টিল ও জিংকালুম। কারখানাটির উৎপাদনক্ষমতা ৭ লাখ ৫০ হাজার এমটিপিএর বেশি। লং স্টিলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান একেএস। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১ দশমিক ৪ এমটিপিএ উৎপাদন করতে সক্ষম। সম্পূর্ণ একীকরণের প্রক্রিয়ায় আবুল খায়ের স্টিল ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের শীতলপুর, সীতাকুণ্ডে দেশের প্রথম ও একমাত্র ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস (ইএএফ) স্থাপন করে। এটি স্টিলের ১০০ শতাংশ পরিমার্জন, বিলেটগুলোয় ঢালাই এবং বিলেটগুলোকে উচ্চ মানের তৈরি পণ্যগুলোয় রোলিং সক্ষম পণ্য উৎপাদন করে। আবুল খায়ের ইস্পাত ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স ও পরিবেশগত বিবেচ্য বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি জ্বালানি ও সম্পদের স্বল্প ব্যবহার নিশ্চিত করে। বর্জ্য হ্রাস করে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পুনর্ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়া হয় তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। উন্নত মানের পণ্য এবং ভোক্তাদের মন জয় করতে আবুল খায়ের স্টিল ক্রমাগত উন্নতি ও উদ্ভাবনের অংশ হিসেবে ISO 9001:2008 সনদপত্র অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশজুড়ে এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার ও সেলস ফোর্সের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। যার মাধ্যমে বিক্রির আগে ও পরবর্তী গ্রাহক সহায়তার সুবিধা রয়েছে।

একেএস বাংলাদেশের ইস্পাত বাজারে একটি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। ইস্পাতের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটাতে উদ্ভাবনের অগ্রভাগে রয়েছে এটি।

একেএস রিবার নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহৃত একটি উচ্চ মানের রিইনফোর্সিং বার। সম্প্রতি চালু করা একেএস বি৫০০ডব্লিউআর বাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী বারগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটির উচ্চ নমনীয়তা রয়েছে। AKS বিভিন্ন নির্মাণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট চাহিদা মেটাতে ব্যাসের বিস্তৃত পরিসর দেয়। একেএস রিবারের ব্যাস ৮-৪০ মিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

একেএস প্রথম ভূমিকম্প প্রতিরোধী ইস্পাত প্রবর্তন করে। সম্প্রতি একেএস বি৫০০ডব্লিউআর রিইনফোর্সিং বার প্রবর্তন করেছে, যা একটি উচ্চ নমনীয়তা শ্রেণীর ইস্পাত। একে বিশেষভাবে ভূমিকম্প প্রতিরোধী হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। পণ্যটি ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক মানের সব প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।

একেএস আইএসও, আইএস, বিএস ও এএসটিএমের মতো আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা নিশ্চিত করে যে পণ্যটি সর্বোচ্চ মান পূরণ করে।

পদ্মা সেতু, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল), রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদির মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে একেএস একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী প্রতিষ্ঠান।

একেএস সামাজিক দায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য নিবেদিত। তার ক্রিয়াকলাপগুলোয় ব্যবসাটি টেকসই অনুশীলনগুলো বাস্তবায়ন করেছে, যেমন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা।

আবুল খায়ের গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে আবুল বিড়ি কোম্পানি থেকে এ গ্রুপের ব্যবসা শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে বিড়ি ব্যবসা দিয়ে যাত্রা হয় গ্রুপটির। ১৯৭৮ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের মারা যান। তার আগ পর্যন্ত বিড়ি ও ট্রেডিংই ছিল এটির মূল ব্যবসা।

এটির সদর দপ্তর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে অবস্থিত এবং এর কার্যক্রম বর্তমানে বহু ব্যবসায় রূপান্তর হয়েছে। এটি স্টিল, সিরামিকস, খাদ্যদ্রব্য, সিমেন্ট ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদন করে। এসব ব্যবসায়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক পণ্য আমদানি করে গ্রুপটি। উল্লেখ্য, আমদানি ও রাজস্ব দেয়ার শীর্ষে আবুল খায়ের গ্রুপ।

আবুল খায়েরের উত্তরসূরিরা পরে গড়ে তোলে স্টিল মিল, সিমেন্ট কারখানা, চা বাগান, ডেইরি প্রডাক্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গরু মার্কা ঢেউটিন দিয়ে ইস্পাত শিল্পে নাম লেখায়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি করোগেটেড কালার কোটেড ঢেউটিন উৎপাদন শুরু করে, যা বর্তমানে ২০টির বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। সম্প্রতি তারা বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে একেএস টিএমটি ৫০০ডব্লিউ ইস্পাতের রড উৎপাদনে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন