সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে নতুন নির্দেশনা

বিদ্যুতে ব্যয়সীমা বেড়েছে ৫%, বন্ধ থাকবে থোক বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের বেশকিছু খাতে বরাদ্দ ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এতে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়ের সীমা ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১, অধিশাখা-১-এর উপসচিব মো. হেলাল উদ্দীনের সই করা পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ, পেট্রল, অয়েল, লুব্রিক্যান্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দেয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। গত বছর জারি করা পরিপত্রে বিদ্যুৎ খাতে ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে এবার বিদ্যুতে ব্যয়সীমা ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। গত বছর জারি করা পরিপত্রে সব ধরনের ভবন বরাদ্দ বন্ধ করা হলেও এবার তিনটি মন্ত্রণালয়ে ভবনের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। এবারের পরিপত্রে আরো বলা হয়, সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) খাতে বরাদ্দ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরনো টিওঅ্যান্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এবার বিদ্যুৎ, পেট্রল, অয়েল, লুব্রিক্যান্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করার সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গতবারের তুলনায় বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়সীমা ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) বন্ধ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।

অর্থ বিভাগের জারি করা ওই পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে এ ধরনের ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় হলে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বিদেশে ভ্রমণ করা যাবে। যেসব ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে সেগুলো হলো পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের দেয়া স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নেয়া। বিদেশী সরকার বা প্রতিষ্ঠান কিংবা উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে এবং সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে। সেই সঙ্গে প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেন্স টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির গত ২ জানুয়ারি জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একান্ত অপরিহার্য হলে পিএসআই বা এফএটির আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

গত বছর জারি করা পরিপত্রে উল্লেখ করা খাতগুলোয় বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে কিংবা অন্য কোনো খাত থেকে এসব খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না বলে নির্দেশনা থাকলেও এবারের পরিপত্রে এ ধরনের কিছু বলা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন