জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় আইন করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী এ সংক্রান্ত ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি বিল-২০২৪’ তোলেন। পরে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, আমাদের প্রাথমিক
শিক্ষাকে একেবারেই তৃণমূলের পর্যায়ের শিশুদের যোগ্য করে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী তার
সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। তিনি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছেন, যেই গ্রামে
বিদ্যালয় নেই সেটি খুঁজে বের করে আমাদের চরাঞ্চলে স্কুল দিয়েছেন, প্রশিক্ষণের আয়োজন
করেছেন। সন্তানকে স্কুলে পাঠানো মায়ের মোবাইল অ্যাকাউন্টে মাসে দেড়শ' টাকা চলে যায়
সেটিও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। শিক্ষার প্রতি তার যে অনুরাগ তার বহিঃপ্রকাশ এটি। তিনি
বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা, এইযে আন্তরিকতা-এই লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। সেটি
হচ্ছে ডিজি কিংবা মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক বদলি বাণিজ্যের তদবির আর ট্রেনিংয়ের একটা সিন্ডিকেট।
সেই সিন্ডিকেটটা ভাঙা দরকার।
আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ নাথ বলেন, অনলাইনে বদলির আবেদনের
কথা বললেও ম্যানুয়ালি যে বদলিগুলো হচ্ছে সেই ডিজি ও মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক তদবিরটা যদি
বন্ধ করতে হবে। আমি গ্রামের মানুষ; আমার চরে
কেউ থাকতে চান না। এক বছরের বেশি রাখতেই পারি না। প্রতিটা উপজেলায় একটি করে আবাসিক
প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান
তিনি।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী
রুমানা আলী বলেন, দ্য গভর্নমেন্ট এডুকেশনাল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন অর্ডিন্যান্স
১৯৬১ অনুযায়ী বাংলাদেশে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। কিন্তু
বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যুগোপযোগী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করেছে।
যেমন- জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠায় প্রণীত আইন। উল্লিখিত অর্ডিন্যান্সে
দেওয়া ক্ষমতাবলে গঠিত ১৪ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস সরকারের পূর্বানুমতি নিয়ে ‘জাতীয়
প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, ময়মনসিংহ; রেজুলেশন-২০০৪’ নামে একটি রেজুলেশন প্রণয়ন করে
এবং রেজুলিউশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম
বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা
করা একান্ত প্রয়োজন। তাই নেপের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা সমীচীন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, নেপ-এর আইন বা বিধি না থাকার
কারণে শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থা/প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদফতরের অধীন কর্মকর্তারা প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে একাডেমিতে যোগদান করেন। তবে
অধিকাংশ কর্মকর্তার গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের একাডেমির মূল
কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন আইন করা হচ্ছে।