![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_386723_1.jpg?t=1718896829)
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এর পরপরই
‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন
করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ
উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। নতুন সরকার এবং নতুন
সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী, নতুন প্রতিমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়ে
তিনি বলেন, এ বাজেটটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার এটি শেষ বাজেট।
আমাদের যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট চলছে, সে সংকটগুলো মোকাবেলার জন্য বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ
হাতিয়ার। এ কারণেও এবারের বাজেটটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, আমরা মোটা দাগে ৩/৪টি পয়েন্ট নিয়ে বলব। প্রথমেই যে
বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো মূল্যস্ফীতি কমানো, সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া-
এ ব্যাপারে এবারের বাজেট কী করেছে। একটি হলো রাজস্ব কাঠামোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থাৎ
কর কাঠামোতে পরিবর্তন এনে নিম্ন আয়ের মানুষকে কোনো ধরনের স্বস্তি দেয়া হয়েছে কিনা।
এ বাজেটের যে করধাপগুলো ছিল এবং করের হারের পরিবর্তন ইতিবাচক হিসেবে
দেখছেন বলে জানান তিনি।
অপ্রদর্শিত বা অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়ে
তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত বা কালো টাকার ওপর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেগুলোকে সাদা করা যাবে।
এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সামাজিক ন্যায়
ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে যা গ্রহণযোগ্য নয়।
মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিসের ওপর করছাড়কে ভালো
প্রস্তাব বলে তিনি জানান। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিয়ে শঙ্কা
প্রকাশ করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেকোনো একটি নীতি অর্থাৎ মুদ্রা বা বাণিজ্যনীতি
এককভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। খাতগুলো এক অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত সেজন্য
আমাদের এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, তৃতীয় আরেকটি বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে নিম্ন
বা মধ্য আয়ের মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাজেটের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে অর্থ বরাদ্দের সুযোগ থাকে। জিডিপির হিসাব
বা মোট বাজেটের আকারের দিক থেকে তা সামান্য বেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই রাজস্ব বোর্ডের ওপর যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়
সেটি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। গত ১০ বছরে দেখা গেছে কোনোবারই সেটা প্রতিপালন করা সম্ভব
হয় না। এর অন্যতম কারণ তাদের ওপর বিরাট লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়।
লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত করা উচিত, রাতারাতি এত প্রবৃদ্ধি সম্ভব
না বলে তিনি জানান।
দেশে উৎপাদিত জুসের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে বা কল রেটের ওপর- এগুলো
আসলে প্রকারান্তরে ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। মূল্যস্ফীতির চাপের পাশাপাশি এ ধরনের বাড়তি
কর মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন করে তুলবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, তৃতীয় আরেকটি বিষয়ে জোর দিতে চাই
ঋণের দায় দেনা পরিশোধ, এটা তো বাড়ছে। বাজেট ঘাটতির অন্যতম একটা অংশ আসবে ব্যাংক ঋণ
থেকে। সরকার চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। আগামী অর্থবছরেও ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বাড়বে।
ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে সেটা স্পষ্ট।
বাজেটের সঙ্গে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামো দেয়া হয়েছে,
সেখানে অর্থনীতির মূল সূচকগুলো লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রাগুলোতে আইএমএফ
যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সেগুলোর কাছাকাছি নেয়ার জন্য সামান্য যোগ করা হয়েছে।
সবশেষে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
গত ২৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর ১০ ছুঁই ছুইঁ। এখন আমরা ১ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি
সাড়ে ৬ শতাংশে কমিয়ে আনব কীভাবে। এ লক্ষ্যমাত্রাগুলোতে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই বলে আমাদের
মনে হয়েছে।