ইপিবির দাবি

অর্থবছরের ১১ মাসে রফতানি ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ডলারের পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিশ্ববাজারে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ বা ৫১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ দাবি করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৫ হাজার ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য। সে হিসাবে ১১ মাসে ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইপিবি।

চলতি অর্থবছরের শুরুতেই রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ হিসাবে লক্ষ্যপূরণে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে আরো ১ হাজার ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ বা ১০ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতে হবে রফতানিকারকদের।

তবে মে মাসে দেশ থেকে রফতানি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত মাসে ৪০৭ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হয়েছিল। আগের বছরের একই মাসে রফতানি হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য।

ইপিবির গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোমটেক্সটাইল অন্যতম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের মোট রফতানির ৯১ দশমিক ৬১ শতাংশজুড়েই ছিল এসব পণ্য। তবে শীর্ষ পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক ও কৃষি ছাড়া বাকিগুলো রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। 

আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। হোমটেক্সটাইল পণ্য রফতানিও ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। তবে কৃষিপণ্য রফতানি বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। 

ইপিবি প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে মোট রফতানির ৮৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই সময় ৪ হাজার ২৬৩ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। এবার নিটওয়্যার তৈরি পোশাক রফতানিতে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেনে প্রবৃদ্ধি কমে ঋণাত্মক ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছে।

পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত ১১ মাসে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এপ্রিল ও মে মাসে রফতানি টানা কমে যাওয়ার ফলে ১১ মাসের গড় রফতানিতে মন্দা ভাব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এ সময়ে পোশাক রফতানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষত, মে মাসে নিটওয়্যার পণ্যের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমেছে এবং ওভেন পোশাক রফতানি কমেছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। 

বিজিএমইএর মতে, সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে সুদহার বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। ফলে পোশাকের খুচরা বিক্রয় ও আমদানিও কমেছে। চলতি বছর জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ইউরোপের আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাকপণ্যের দরপতন হয়েছে ৮-১৮ শতাংশ। ইউনিটপ্রতি পণ্যের উল্লেখযোগ্য দরপতন রফতানি কমার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ প্রতিনিধিরা বলছেন, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ব্যাংক সুদ সিঙ্গেল ডিজিট থেকে ১৪-১৫ শতাংশ হওয়া এবং এ সংকটময় সময়ে নগদ সহায়তা কমিয়ে আনার ফলে শিল্প প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে, যার কিছুটা প্রতিফলন রফতানি প্রবৃদ্ধিতে ফুটে উঠেছে।

পোশাক খাতকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে  উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান (কচি) বলেন, ‘আমরা একদিকে এনবিআর, বন্দর ও ব্যাংকিং সংক্রান্ত জটিলতা মোকাবেলা করছি। অন্যদিকে শিল্পাঞ্চলের বাইরে নতুন কোনো কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাংক ঋণ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগ ও রফতানি আরো বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।’

২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা; সেই অনুযায়ী নতুন পণ্যে বিনিয়োগ এবং নতুন বাজার তৈরিতে উদ্যোক্তারা তৎপর আছেন বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রফতানি আয় ও অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির স্বার্থে সরকার পোশাক খাতের জন্য বিকল্প ইনসেনটিভ প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত চলমান সব সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন