ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতি সংলাপ

ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখলে কমে আসবে খরচ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখলে স্বাস্থ্য ব্যয় কমে আসবে। চিকিৎসক রোগীর জন্য যে ব্যবস্থাপত্র তৈরি করবেন তাতে ওষুধের ব্র্যান্ড নাম না লেখা হলে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের আক্রমণাত্মক মার্কেটিং কমে আসবে। একই সঙ্গে গ্রাম্য চিকিৎসক, কবিরাজ, দোকানের ওষুধ বিক্রেতাদেরও যথাযথ আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলা ভবনে এক নীতি সংলাপে এসব কথা উঠে এসেছে। বাংলাদেশে ‘ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখলে আক্রমণাত্মক ওষুধ বিপণন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা’—এমন আলোচ্য বিষয় নিয়ে সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। 

সংলাপে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওষুধের আগ্রাসী বাণিজ্য বন্ধে ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লেখার সময় এসেছে। সেক্ষেত্রে ওষুধের গুণগত মান বায়ো ইকুইভ্যালেন্স গবেষণা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে ওষুধের মোট বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রমোশনে খরচ হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। 

বক্তারা আরো বলেন, ‘একজন চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখছেন ঠিকই কিন্তু ওষুধ সরবরাহ করছেন অষ্টম-দশম পাস একজন দোকানি। তারা তাদের সুবিধামতো অর্থাৎ যে ওষুধগুলোয় লাভ বেশি, সেগুলো সরবরাহ করছে। এজন্য ওষুধের গুণগতমান ঠিক রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘এখনই কিছু হয়ে যাবে এজন্য এই সংলাপে আমরা কথা বলছি না। আগামী ১০ বছর পর কী হতে পারে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। চিকিৎসা প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিলে অনেক কম ওষুধ দেয়া যায়। তাতে খরচও কমে আসে। ব্যবস্থাপত্র ঠিকভাবে লেখা হচ্ছে কিনা সেজন্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ওষুধের গবেষণা ও উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এতে বিদেশী কোম্পানিও দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে আগ্রহী হবে। দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো বিষয়ই বিচ্ছিন্ন নয়। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’

সভায় বক্তারা বলেন, ‘ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার প্রচলন অনেক উন্নত দেশে প্রচলিত। ভারতে এভাবে প্রেসক্রিপশন লেখা বাধ্যতামূলক। তবে বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন বা নির্দেশিকা নেই। যার কারণে লাখ লাখ রোগীকে ওষুধের জন্য বড় অংকের খরচ করতে হয়। জেনেরিক নাম লিখলে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা করে ওষুধ গুণমান উন্নত করবে।’

মতবিনিময় সভায় আলোচকরা ওষুধ খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘গ্রামগঞ্জে অসংখ্য প্যারামেডিক্স ওষুধ লিখছেন। সেখানে নজরদারি বাড়াতে হবে। চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াও ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব দিতে হবে। রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টরা যাতে ফার্মেসিতে কাজ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’ 

ওই সংলাপে অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা, ওষুধ প্রস্তুতকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন অংশীজন। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন