চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ

পাঁচ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ, দখল হয়ে যাচ্ছে পরিত্যক্ত রেললাইন

এসএম রাসেল, চাঁদপুর

চাঁদপুর শহরের ছায়াবাণী সিনেমা হলের পেছনের রেললাইনের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে পাঁচটি স্টেশন রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ১০ বছর ধরে বন্ধ এসব স্টেশনের কার্যক্রম। স্টেশনগুলোয় ট্রেন থামলেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন না যাত্রীরা। টিকিট সংগ্রহ করতে হয় ট্রেনে ওঠার পর। এছাড়া জ্বালানি তেল পরিবহনে একসময় বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল করলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এসব রেললাইনের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষ করে ছায়াবাণী সিনেমা হলের পেছনের রেললাইনের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর অংশে ৫১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১১টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে চিতোষী, মেহার, হাজীগঞ্জ, মধুরোড, চাঁদপুর কোর্ট চাঁদপুর স্টেশন। ১০ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে শাহরাস্তি, ওয়ারুক, বলাখাল, শাহতলী, মৈশাদী রেলস্টেশনের। প্রতিটি স্টেশনে একজন স্টেশনমাস্টার, তিনজন সহকারী স্টেশনমাস্টার, তিনজন টিকিট বিক্রি কর্মচারী, তিনজন পয়েন্টসম্যান পাঁচজন পিয়নসহ ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোয় এসব পদে জনবল নেই।

এদিকে একসময় বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল করলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে নদীপথে পণ্য পরিবহন করায় লাইনগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় ছায়াবাণী সিনেমা হলের পেছনের রেললাইনের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, একসময় চাঁদপুর-লাকসাম, চট্টগ্রাম-ভৈরব সিলেটের মধ্যে আটটি ট্রেন চলাচল করেছে। এখন মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে দুটি ট্রেনই চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে চালু রয়েছে। এর একটি আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস এবং অপরটি সাগরিকা এক্সপ্রেস। বাকি লোকাল ছয়টি ট্রেনই এক দশকেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে। সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।

মৈশাদী রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান মানিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে মৈশাদী রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ। স্টেশনে কখনো লোকবল ছিল না। যখন লোকাল ট্রেন চলাচল করেছে, স্বেচ্ছাশ্রমে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা ছিল। এখন স্টেশন আছে, কিন্তু জনবল নেই। এর মধ্যে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে মৈশাদী স্টেশন থেকে যাত্রীরা চলাচল করতে পারছে।

পরিত্যক্ত রেললাইনের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর দুটি অয়েল স্টেশনে ট্রেনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আসে না। এখন নদী পথে আসে। তাই পরিত্যক্ত লাইনে ট্রেন চলাচল করে না। দখল হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত রেললাইন একসময় পণ্য পরিবহন হতো, এখন তা পরিত্যক্ত।

ব্যাপারে চাঁদপুর রেলস্টেশনের মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু লোকবলের অভাবে চাঁদপুর সীমানার পাঁচটি স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে এগুলো একবারে বন্ধ হয়নি, ধাপে ধাপে হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। লোকবল নিয়োগের আশ্বাস পাচ্ছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

পরিত্যক্ত রেললাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত এসব লাইনগুলোয় পণ্য পরিবহন হয়েছে। এর মধ্যে জেলা খাদ্যগুদাম এখন নদী সড়কপথে পণ্য পরিবহন করছে। পদ্মা যমুনা ওয়েল কোম্পানিও নদীপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করছে। খাদ্যগুদাম এবং তেল কোম্পানি আবারো পণ্য পরিবহনের জন্য আবেদন করলে লাইনগুলো সচল করা হবে। তবে দীর্ঘ বছর লাইনগুলো ব্যবহার না করায় কোনো কোনো স্থান দখল হয়ে আছে।

তবে দখল হওয়া রেললাইন উদ্ধার আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। ২৭ ২৮ মে রেলওয়ের মালিকানাধীন জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে চাঁদপুর শহরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাইকিংও করেছে। যাতে অবৈধ দখলে থাকা লোকজন তাদের স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেয়।

রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (এইও) শহীদুজ্জামান বলেন, ‘নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল ২৬ মে চাঁদপুরে আসবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান চলবে।

এরই মধ্যে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা উচ্ছেদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দুইদিনের ওই কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, ২৭ মে চাঁদপুর বড় স্টেশন তৎসংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ের মালিকানাধীন জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। পরদিন ২৮ মে কোর্ট স্টেশন (কালিবাড়ী) তৎসলগ্ন এলাকায় একইভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন