উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় পাট চাষ কমেছে ফরিদপুরে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ফরিদপুর

পাট গাছের বৃদ্ধি প্রথম দিকে কিছুটা কম ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় সেই সমস্যা কেটে গেছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টরে। আবাদ কমার কারণ হিসেবে চাষীরা বলছেন, খরা ও পাট উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উপকরণ এবং শ্রমিকের মজুরি অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে উৎপাদন খরচ স্থান ভেদে ২৫-৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এছাড়া বিগত বছরগুলোয় পাটের প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় আগ্রহ কমছে চাষীদের। এ কারণে চলতি মৌসুমে পূরণ হয়নি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর খরার কারণে পাটের বৃদ্ধি প্রথম দিকে কিছুটা কম ছিল। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় সেই সমস্যা কেটে গেছে।

স্থানীয় চাষীদের দাবি, বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করেই এ অঞ্চলের চাষীরা পাটের আবাদ করেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মৌসুমজুড়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে চাষীদের। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অতিরিক্ত সেচ দেয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারেননি কৃষক। এজন্য পাটের মান ভালো হয়নি। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয়েছে। এ কারণে চলতি বছর পাট আবাদে আগ্রহ কিছুটা কমেছে চাষীদের।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামের পাটচাষী মো. রেজাউল করিম, হাটখোলার চরের নুরুল ইসলাম মৃধাসহ কয়েকজন জানান, এ বছরও অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে হয়েছে। প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে তাদের। এছাড়া আগে ৫০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া গেলেও এ বছর ৮০০ টাকা দিতে হয়েছে। পাশাপাশি সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বিগত বছরের চেয়ে এবার ২৫-৩০ শতাংশ খরচ বাড়বে। এ বছরও বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সামনে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে জলাশয়ে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এতে পাটের পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দূরের জলাশয়ে নিতে পরিবহন এবং শ্রমিক খরচ বাড়বে। বহমান পানিতে পাট পচাতে না পারলে মানও ধরে রাখা কষ্টকর হবে। পাটের মান ধরে রাখতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত দামও পাওয়া যাবে না। এ বছর গড়ে পাটের মণপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কৃষকদের দাবি, এ বছর পাটের দাম প্রকার ভেদে ৪-৫ হাজার টাকা না পেলে বিপাকে পড়তে হবে কৃষকদের। ন্যায্য দাম না পেলে পাটের আবাদ থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আগামীতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টরে। দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও স্বাভাবিকভাবেই কম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বছর আবাদ হওয়া জমি থেকে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯২৫ টন পাট উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে দুশ্চিন্তা থাকলেও সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় সে শঙ্কা কেটে গেছে। বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর থেকে পাট দ্রুত বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তারা ছ্যানা পোকার আক্রমণসহ যেকোনো সমস্যায় চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে জেলায় গড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরপ্রতি দুই দশমিক ৫৩ টন ঠিক থাকবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন