শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে দাঁড়াতেই দেয়নি জিম্বাবুয়ে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টি-টোয়েন্টি সিরিজের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ছবি: সালাউদ্দীন রাজু

টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো কোনো দলের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। যদিও সে সুযোগ হাতছাড়া হলো টাইগারদের। মিরপুর শেরেবাংলা  জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আফ্রিকার দলটি জিতেছে ৮ উইকেট ও ৯ বল হাতে রেখে। এ হার বিশ্বকাপ যাত্রার আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলকে একটা বড়সড় ধাক্কাই দিল কি? 

শেষ ম্যাচে বাজেভাবে হারলেও ঠিকই ট্রফি উৎসব করল স্বাগতিকরা। কেননা চট্টগ্রামেই টানা তিন জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা। এরপর ঢাকায় ফিরে চতুর্থ ম্যাচও জিতে নেন শান্তরা। সিরিজের সমাপ্তি হলো হার দিয়ে।  

সিরিজের তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে লড়াই করে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। ক্রমেই আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করা অতিথি দলটি গতকাল বল-ব্যাটে দাপট দেখিয়ে জয় তুলে নিতে সমর্থ হয়। এ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা, তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ব্রায়ান বেনেট।

সকালে টস জিতে বোলিং বেছে নেয় জিম্বাবুয়ে। আগে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকরা দলীয় ৯ রানে হারায় দুই ওপেনারকে। তানজিদ হাসানকে ফেরান ব্লেসিং মুজারাবানি, আর সৌম্য সরকার শিকার হন ২০ বছর বয়সী স্পিনার বেনেটের। তানজিদ হাসান ৫ বলে ২ ও সৌম্য সরকার ৭ বলে ৭ রান করেন। দলীয় ১৫ রানে বিদায় নেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা তাওহিদ হৃদয় (৬ বলে ১)। তাকে ফেরান বেনেট। এরপর শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামাল দিয়ে দলকে সংহত অবস্থান গড়ে দেন। 

শান্ত ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৬ রান করে বিদায় নেয়ার পর রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। সাকিব আল হাসান (১৭ বলে ২১) সুবিধা করতে পারেননি। দলীয় ১২৩ রানে সাকিব ও ১২৮ রানে মাহমুদউল্লাহ ফেরেন সাজঘরে। মাহমুদউল্লাহ ৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান করেন। শেষ দিকে জাকের আলীর (১১ বলে ২৪*) ব্যাটে ভর দিয়ে দলের সংগ্রহ ১৫০ পেরোয়।

সিরিজের অন্তত একটি ম্যাচ জিততে মরিয়া জিম্বাবুয়ে রান তাড়া করতে নেমে দারুণ সূচনা করে। তাদিওয়ানাশে মারুমানি ও বেনেট ওপেনিং জুটিতে ৪ ওভারেই ৩৮ রান তুলে নেন। এ জুটিতে অবশ্য মারুমানির অবদান মাত্র ১ রান, বাকি ৩৬ বেনেটের! মারুমানি ৭ বলে ১ রান করে সাকিবের শিকার হন। এরপর রাজা ও বেনেটের ৬৬ বলে খেলা ৭৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে দেয়। বেনেট ৪৯ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৭০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে সাইফউদ্দিনের শিকার হন। 

এরপর জোনাথন ক্যাম্পবেলকে নিয়ে ২০ বলে ৪৫ রান তুলে জিম্বাবুয়ের জয় নিশ্চিত করেন রাজা। এ জুটিতে রাজার একারই ৩৫, আর ক্যাম্পবেলের অবদান ৮ রান। ৪৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন সফরকারী দলের অধিনায়ক। ৭০ রান করার পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ব্রায়ান বেনেট। 

২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ এ সময়ে প্রথমবারের মতো যেকোনো দলের বিপক্ষে ৫-০-তে সিরিজ জয়ের সুযোগ এসেছিল। তবে সুযোগটি লুফে নিতে ব্যর্থ শান্তর দল। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত তিনবার পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলেছে লাল-সবুজরা। ২০২১ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুটি পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ওই দুটি সিরিজই জিতে নেয় টাইগাররা। যদিও তার কোনোটিই ৫-০-তে জেতা হয়নি। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১-এ ও কিউইদের ৩-২-এ হারায় স্বাগতিকরা। এবারো হলো না।

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এটা বাংলাদেশের অষ্টম টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এর মধ্যে বাংলাদেশ চারটি ও জিম্বাবুয়ে একটি জিতেছে, বাকি তিনটি ড্র হয়। 

গতকাল সিরিজ শেষে বাংলাদেশ দলনায়ক নাজমুল হোসেন বলেছেন, ‘এ সিরিজে আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে অনেক জায়গায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আজ রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ও জাকের (অনিক) আমাদের হয়ে দারুণ খেলেছে। অবশ্যই আমাদের সূচনা ভালো ছিল না। তবে মিডল অর্ডারের সুযোগ ছিল। বিশ্বকাপে আমাদের ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজটা আমাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি গ্রহণের একটি সুযোগ।’

টেক্সাসে ২১, ২৩ ও ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নেবে টাইগাররা। আগামী ৮ জুন ভোরে ডালাসে শ্রীলংকার সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলবে শান্তর দল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৭/৬ (মাহমুদউল্লাহ ৫৪, শান্ত ৩৬, জাকের ২৪*, সাকিব ২১; বেনেট ২/২০, মুজারাবানি ২/২২)। জিম্বাবুয়ে: ১৮.৩ ওভারে ১৫৮/২ (সিকান্দার ৭২*, বেনেট ৭০; সাকিব ১/৯, সাইফউদ্দিন ১/৫৫)। ফল: জিম্বাবুয়ে ৮ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: ব্রায়ান বেনেট (জিম্বাবুয়ে)। প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)। সিরিজ: বাংলাদেশ ৪-১-এ জয়ী।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন