প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছরেও গড়ে ওঠেনি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান

নানা সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I ঠাকুরগাঁও

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এখানকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে ১৯৮৮ সালে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির (বিসিক) শিল্পনগরী। কিন্তু যাত্রা শুরুর ৩৬ বছরেও এখানে বড় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। নানা সংকটের কারণে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে খুঁড়িয়ে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সুযোগ-সুবিধার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত এক শিল্পনগরী। বেহাল সড়কের কারণে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন কঠিন হয়ে পড়েছে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্দশা দীর্ঘদিনের। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও ফল আসেনি। 

বিসিক জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭-৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের গোবিন্দনগরে ১৫ একর জমির ওপর বিসিক শিল্পনগরীর যাত্রা শুরু হয়। সেখানে ৫৩টি শিল্প ইউনিটের বিপরীতে ১০৫টি প্লট রয়েছে। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত শিল্প ইউনিটের প্লটগুলো এলোমেলো ও ফাঁকা থাকলেও এখন বরাদ্দ হয়েছে সব প্লটের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বরাদ্দ হলেও কয়েকটি প্লটে কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। বেশির ভাগ প্লটে গড়ে তোলা হয়েছে চিড়া, মুড়ি, বেকারি ও প্লাস্টিকের কারখানা। গড়ে ওঠেনি বড় কোনো উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেছেন অনেক উদ্যোক্তা। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ী প্লট পাননি। এ কারণে বরাদ্দের পরও অনেক প্লট ফাঁকা পড়ে আছে বলে মনে করছেন তারা। 

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট নেয়া ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের এখানে তেমন কোনো বড় উদ্যোক্তা নেই। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানগুলোই এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কাঁচামাল নিয়ে আসা অনেক কঠিন। আবার এখান থেকে উৎপাদিত পণ্য বাইরে নিয়ে যেতে বিপাকে পড়তে হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামলে চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। কোনো ধরনের আলোর ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় নজরে নিয়ে সংস্কার করলে আমাদের কাজের গতি বাড়বে।’ ৷

উদ্যোক্তাদের অনেকে জানান, অব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে উদ্যোক্তা লোকসানে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। উল্টো বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। তবু নানা সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে বিসিক শিল্পনগরী। খানাখন্দে ভরা সড়ক, পানি সংকট, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষুব্ধ শিল্পোদ্যোক্তারা। এসব সমস্যার সমাধান না হলে ভালো কিছু করা অসম্ভব। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে শিল্পনগরীর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক নুরেল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের সবগুলো প্লট বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা কাজ শুরু করেননি তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করবেন। তেমন বড় ধরনের কোনো উদ্যোক্তা না থাকার ফলে এখানে বড় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বড় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার। রাস্তাঘাট আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আমরা কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কয়েক দফায় অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে আমরা সংস্কারের কাজ শুরু করে দেব।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন