বিশ্লেষণ

কেমন চলছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: একটি সামাজিক গবেষণা

শামসুল আরেফীন

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং করোনা মহামারী ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পরামর্শে ও নির্দেশনায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবির) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা (জিএসটি) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর করোনা মহামারীর প্রকোপ কমতে শুরু করলেও এ পরীক্ষা পদ্ধতি এখনো বহাল রয়েছে। এ পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি-বিচ্যুতি, কার্যকারিতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুবিধা-অসুবিধা, স্বাতন্ত্র্য ইত্যাদি বিষয়াদি আমলে না নিয়ে দেশে এ বছরও চতুর্থবারের মতো পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনটি গুচ্ছে বিভক্ত হয়ে মোট ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এতে অংশগ্রহণ করছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় গুচ্ছ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে ২২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন ছেপেছে দৈনিক সমকাল। সংবাদমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদন থেকে এ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কোর কমিটির কারো কারো আর্থিক লেনদেনের অনিয়মের কথা উঠে এসেছে, যা নতুন করে এ পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এ-সংশ্লিষ্টদের যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে লেখাটি আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। 

তবে গুচ্ছ পরীক্ষায় কোন ধরনের অনিয়ম ও ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়, বরং সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে মাঠ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা জানার মধ্যে দিয়ে লেখাটিতে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চেষ্টা করব? আরো সহজ করে বললে, বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে কারণগুলো দেখিয়ে ইউজিসি এ পরীক্ষা পদ্ধতি মেনে নিতে রাজি করাল সেই সমস্যাগুলোই-বা কতটুকু উত্তরণ করা গেল কিংবা কোথায় কোথায় এখনো উন্নতির দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে—সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও খুঁজে দেখব। ওপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখেই আমরা তিন সহকর্মী এবং গবেষক (শামসুল আরেফীন, আইরিন পারভীন ও আবুল কালাম) ২০২২ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০২১-২২ অর্থবছরে বিমক কোড নং- ৩২৫৭১০৩ অনুযায়ী) ‘A Critical Evaluation of the GST-Universities Integrated Admission System (2020-2021) in Bangladesh’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রস্তাব জমা দিই। পরবর্তী সময়ে আমাদের এ গবেষণার প্রস্তাবটি রিভিউ বোর্ডে যাচাই-বাছাই শেষে জুলাইয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। সেই ধারাবাহিকতায় একই বছরের নভেম্বর থেকে আমরা তথ্য (ডাটা) সংগ্রহ করা শুরু করি যেটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে এসে শেষ হয়। 

এ গবেষণা শুরু করার সময় থেকেই আমরা বিভিন্ন স্তরে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রচলিত গুণগত এবং পরিমাণগত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেই গবেষণাটি করতে চেষ্টা করেছি। আমরা গবেষণার জন্য উপযুক্ত ফিল্ড হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাছাই করি। দুটো বিষয় মাথায় রেখেই আমরা এ দু সাইট নির্বাচন করি। প্রথমত, সময় ও বাজেটের দিকে খেয়াল রেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, একটি বিভাগীয় শহর এবং একটি জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার কারণে সামগ্রিক চিত্র বোঝা সহজতর হবে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেসব শিক্ষার্থী গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে তাদের গবেষণার বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা। সেটি করতে গিয়ে দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্যামপ্লিং ইকুয়েশন ব্যবহার করে আমরা ৩৩৭ জন শিক্ষার্থীকে নমুনা হিসেবে জরিপের জন্য বাছাই করি। তাছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যারা গুচ্ছ পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিল এ রকম শিক্ষকদের মধ্য থেকে ছয়জন শিক্ষককে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এ পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে মাঠ পর্যায়ে আরো পাঁচজন গবেষণা সহকারী যুক্ত থেকেছেন। অধিকন্তু আমরা চেষ্টা করেছি ডাটা সংগ্রহের সব পর্যায়ে গবেষণার মূল্যবোধ অনুসরণ করে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা সংগ্রহ করতে। তথাপি নমুনা সংগ্রহ শেষে তথ্যে অসম্পূর্ণতা থাকায় ১২টি নমুনা জরিপ চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে বাদ রেখেছি। ফলে এ গবেষণার ফলাফলটি মূলত ৩২৪ জন শিক্ষার্থী (বশেমুরবিপ্রবি: ৫৫ শতাংশ ও খুবি: ৪৫ শতাংশ) এবং পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয়জন শিক্ষকের দেয়া তথ্য এবং উপাত্তের ওপরে নির্ভর করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যথাক্রমে ৫২ ও ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা ছিল পুরুষ এবং নারী শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশের বসবাস (প্রায় ৫৩ শতাংশ) গ্রামে এবং বাদবাকি ৪৭ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। তাছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সামাজিক-জনমিতি বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পারিবারিক মাসিক আয় ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। অন্যদিকে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পারিবারিক মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা নিচে, যা বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় থেকে অনেক কম। পরিমাণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়—প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকরী ছিল। যদিও এর বিপরীতে প্রায় ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন এ পরীক্ষা পদ্ধতি ততটা কার্যকরী ছিল না এবং বাদবাকি ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ প্রশ্নের উত্তরে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। অন্যদিকে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন আগের পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যয়ভার বেশি ছিল, তথাপি উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন আগের পরীক্ষা পদ্ধতি বেশি কার্যকরী ছিল। কেন এ রকম মিশ্র অভিজ্ঞতা হলো সেটির উত্তর পাওয়া যায় পরীক্ষার্থীদের করা সম্পূরক প্রশ্ন বিশেষ করে আবেদন ফি, পরীক্ষা কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা, পরীক্ষার খরচ, প্রশ্নপত্রের মান, ভর্তিসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা জানার মধ্য দিয়ে। 

উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা তাদের সময় বাঁচিয়েছে। তাছাড়া ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন এ পরীক্ষা পদ্ধতি তাদের খরচ কমিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক শিক্ষার্থী (৩৮ শতাংশ) মনে করেন, এ পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে আপাতদৃষ্টিতে খুব বেশি খরচ কমেনি। গুণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষক ও এমনটাই মনে করেন। তার মতে, ‘যেসব অভিভাবক অনেক দূর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। তারা মনে করেন, এ পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর কারণে তাদের খরচ এবং দুর্ভোগ দুটোই দ্বিগুণ হয়ে গেছে’। অন্যদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক এ মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘এ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় বেঁচে গেছে এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে গেছে’। যদিও ওই শিক্ষক মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতি ত্রুটিযুক্ত রয়ে গেছে। 

জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাই করে দেখা যায়, প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার অধিক আবেদন এবং অন্যান্য ফি বাবদ খরচ করেছেন। এছাড়া উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থীই আমাদের জানিয়েছেন, গুচ্ছ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর একেকজন গড়ে ৫-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৪৮ জন শিক্ষার্থীকেই মাইগ্রেশন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আমাদের আরো জানিয়েছেন যে তারা তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। গুণগত গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেও দেখা যায়—শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশন জটিলতা, পছন্দের বিষয় না পাওয়া, ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাসহ নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করতে না পারাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ব্যাপারটি বোঝার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত খুবির একজন কো-ফোকাল পয়েন্টের বক্তব্য আমলে নেয়া যেতে পারে। ওই শিক্ষকের ভাষায়, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে কয়েকটি পর্যায়ে দেখা যায়। যেমন একটি পর্যায় হচ্ছে পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষা গ্রহণ গতানুগতিক। এটি নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু সামগ্রিক পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পরবর্তী সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া—আমার মনে হচ্ছে, এ জায়গাটিতে আমাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যেমন এবারের চলমান ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ এবং তার পরবর্তী সময়ে একটা দীর্ঘ সময় লেগে গেছে আবেদনপত্র আহ্বান করা, প্রক্রিয়া করা ও ভর্তি করায়। 

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের করা উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে শুধু একটি পরীক্ষা দিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে বলে তারা সবসময় মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ অনুভব করেছেন। বিশেষ করে কোনো কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তার জন্য বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। পরিমাণগত গবেষণার ফলাফলেও আমরা দেখি, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এ পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে এ প্রভাব কেমন তা এ গবেষণা থেকে জানা সম্ভব হয়নি। 

পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ-সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে এ গবেষণায় যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে তারা প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত থাকার কারণে কেন্দ্র এবং প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন। অধিকাংশ শিক্ষকই আমাদের এ মর্মে জানিয়েছেন যে এ পরীক্ষা আয়োজন করা থেকে শুরু করে, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সব পর্যায়েই তাদের কোনো অংশীদারত্ব নেই। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেহেতু কোর কমিটি গ্রহণ করে সে কারণে সাবকমিটিতে যারা থাকেন তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেন। 

উত্তরদাতাদের মধ্য থেকেই প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন, ইউজিসি এ পরীক্ষা পদ্ধতি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করেছে, তথাপি ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতির সংস্কার দরকার। সেজন্য প্রশ্নপত্রের ধরনে পরিবর্তন (৬৯ শতাংশ বলেছেন) আনয়নসহ, শুধু লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা (৭৫ শতাংশ মতামত দিয়েছেন) এবং এক ইউনিট থেকে আরেক ইউনিটে ভর্তির (৭৪ শতাংশ) উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে একটি সম্পূরক প্রশ্নে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন কিংবা গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখার অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে এ ভর্তি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বিবেচনায় এ পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করা সাপেক্ষে সেটি ভবিষ্যতে চলতে পারে। কিন্তু সেজন্য তারা মনে করছেন, পরীক্ষা গ্রহণের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্র এবং পেরিফেরির মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানো, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সবার অংশীদারত্ব এবং পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে সর্বাগ্রে সেগুলোর সংস্কার সাধন করতে হবে। 

শামসুল আরেফীন: পিএইচডি গবেষক, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষাছুটি), সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন