যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের তিন মাস পেরিয়েছে। উপত্যকাজুড়ে রক্তপাত-প্রাণহানি চলছেই। গাজাবাসীর চরম মানবিক বিপর্যয় দেখে এর মধ্যে স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল দুই পক্ষ। এরপর আবারো শুরু হয় পূর্ণমাত্রার সংঘাত। তবে আবারো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বড় যুদ্ধবিরতির। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি। উভয় পক্ষ রাজি হলে শিগগিরই এটি কার্যকর হতে পারে। খবর এপি।

হোয়াইট হাউজের এক সিনিয়র কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, প্রস্তাবিত চুক্তিটি সরাসরি যুদ্ধ বন্ধ করবে না। তবে তাদের আশা, চুক্তিটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাত সমাধানের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।

এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রায় দুই মাসের একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

হোয়াইট হাউজ সূত্রের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস কাতার, মিসর ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফ্রান্সে দেখা করবেন। এ সাক্ষাতের উদ্দেশ্য একটি সম্ভাব্য বন্দি বিনিময় চুক্তিতে পৌঁছানো, যা সাময়িকভাবে ইসরায়েলকে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে বিরত রাখবে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে গাজায় থেমে নেই প্রাণহানি। উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো অন্তত ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৯০ জন। গতকাল হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬ হাজার ৪২২ ও আহত ৬৫ হাজার ৮৭ জন। নিহতদের ১১ হাজারের বেশি শিশু ও সাড়ে সাত হাজার নারী। এছাড়া যুদ্ধের কারণে গাজা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা।

এদিকে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার পর জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএতে অনুদান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে আরো সাত দেশ। এ তালিকায় আছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ড। ইসরায়েলে হামাসের অভিযানে সংস্থাটির কয়েকজন সদস্যের সম্পৃক্ততার অভিযোগের জেরে এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে তারা।

দেশগুলোর এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চলছে তীব্র সমালোচনা। এটিকে ২০ লাখ গাজাবাসীর ‘‌মৌলিক চাহিদার ওপর আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধের জন্য পাঁচদিনের ত্রাণ অবরোধের ডাক দিয়েছে ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও বিক্ষোভকারীরা। ত্রাণবাহী ট্রাক আটকানোর জন্য বিভিন্ন প্রবেশদ্বারের দিকে অবস্থান নিচ্ছে তারা।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, ইসরায়েলের পতাকা ও ব্যানার নিয়ে কেরাম শালোম নামে পরিচিত কারেম আবু সালেম ক্রসিংয়ের দিকে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে রেখেছে তারা। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে শেষ পর্যন্ত মিসরের অন্য প্রবেশপথে যেতে হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, প্রায় ২৫০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করেছিল হামাস। সংঘর্ষের মাঝখানে সাতদিনের যুদ্ধবিরতিতে ১২১ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে তারা। বলা হচ্ছে, এখনো ১৩৬ জন জিম্মি হামাসের হাতে রয়েছে। বাকি ৩৩ জন মারা গেছে।

সাতদিনের ওই যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর এ পর্যন্ত পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৬ হাজার ৩০৫ জন ফিলিস্তিনিকে বন্দি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন