সময়ের ভাবনা

সুনীল অর্থনীতিতে ভবিষ্যৎ ও জাপানি বিনিয়োগের সম্ভাবনা

ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম

সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি হলো সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও তার তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যেকোনো সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হলে সেটি ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির পর্যায়ে পড়ে। উন্নত দেশগুলোয় ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির চর্চা দীর্ঘদিন থেকেই হয়ে আসছে। দেশগুলোর মূল অর্থনীতিতে ব্লু-ইকোনমির ব্যাপক অবদান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপকভাবে সুনীল অর্থনীতির অবদান সংযুক্তির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান চেহারা আমূল পাল্টে যাবে।

সমুদ্র হলো পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার। সমুদ্র মৎস্যসম্পদের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটায়। মানুষ ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া সমুদ্র বালি, লবণ, কবাল্ট, গ্রাভেল, কপার ইত্যাদি খনিজ সম্পদে ভরপুর। তেল ও গ্যাস আহরণের ক্ষেত্র হিসেবেও সমুদ্র অপরিহার্য। সুনীল অর্থনীতি সম্প্রসারণ হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশের সম্পদ বাড়বে, সামাজিক পুঁজি সৃষ্টি হবে, সর্বোপরি পরিবেশে সঞ্চয়-বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট সমুদ্রসীমা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার, যা মূল ভূখণ্ডের প্রায় সমান। সমুদ্রসীমা জয়ের পর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিকাশের এক অপার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে এ খাত থেকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইলিশের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্র থেকে আহরিত মাছের মধ্যে ১৬ শতাংশই ইলিশ। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি রয়েছে। এসব চিংড়ির চাহিদাও প্রচুর। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাগরসীমার মধ্যে তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে। মৎস্য খাত থেকে আয়ের পরিমাণ ২২ শতাংশ, যাতায়াত থেকে ২২ ও গ্যাস-তেল উত্তোলন থেকে আয়ের পরিমাণ ১৯ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশী মাছ শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ৬০ লাখ বাংলাদেশী সমুদ্রের পানি থেকে লবণ তৈরি ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জড়িত। দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে সমুদ্রকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ২৬টি পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো হলো শিপিং, উপকূলীয় শিপিং, সমুদ্রবন্দর, ফেরির মাধ্যমে যাত্রীসেবা, অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহন, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ রিসাইক্লিং শিল্প, মৎস্য, সামুদ্রিক জলজ পণ্য, সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি, তেল ও গ্যাস, সমুদ্রের লবণ উৎপাদন, মহাসাগরের নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু-এনার্জি, খনিজ সম্পদ (বালি, নুড়ি ও অন্যান্য), সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদ, উপকূলীয় পর্যটন, বিনোদনমূলক জলজ ক্রীড়া, ইয়টিং ও মেরিনস, ক্রুজ পর্যটন, উপকূলীয় সুরক্ষা, কৃত্রিম দ্বীপ, সবুজ উপকূলীয় বেল্ট বা ডেল্টা পরিকল্পনা, মানবসম্পদ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নজরদারি এবং সামুদ্রিক সমষ্টি স্থানিক পরিকল্পনা (এমএসপি)।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্রসম্পদের অবদান মাত্র ৯৬০ কোটি ডলার। দেশের স্থলভাগের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা মূল্যবান সম্পদে ভরপুর। ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক রয়েছে। ইজারা দিয়ে এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে ‘ব্লু-ইকোনমি সেল’ গঠন করেছে সরকার।

বাংলাদেশে সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এরই মধ্যে পাঁচ ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করা, উপকূলীয় জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সমুদ্রবন্দরগুলোর আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম জোরদারকরণ, সমুদ্রে ইকোট্যুরিজম ও নৌ-বিহার কার্যক্রম চালু করা, সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রবন্দরগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা।

বর্তমান সরকার ব্লু-ইকোনমির সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। সমুদ্র গবেষণা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সাম্প্রতিককালে সরকার বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং একটি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছে। সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছে। সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানও। এছাড়া গ্যাসসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ উত্তোলন, মৎস্যসম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণিসম্পদ ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের ১৩ জায়গায় রয়েছে মূল্যবান বালি, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম। এগুলোয় মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমেনাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটের মতো মূল্যবান ধাতব উপাদান। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র তলদেশে। 

এদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৪ নম্বর ধারায় টেকসই উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণের লক্ষ্যে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের গুরুত্ব অপরিসীম। এত সম্ভাবনা থাকার পরও আমরা পিছিয়ে রয়েছি বিভিন্ন কারণে। বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও কার্যত এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অর্থনৈতিক কার্যক্রমই শুরু হয়নি। এমনকি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশীদের আকৃষ্ট করার জন্য যে ‘মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে’ চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তাও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে বারবার আটকে গেছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ নামে একটি ক্ষুদ্র প্রশাসনিক সেল গঠন ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপের সরকারগুলো অর্থনীতির এক নতুন ফ্রন্ট হিসেবে সমুদ্রের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে। সমুদ্র অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে দেশের প্রবৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পারছে না? 

কোন খাত সমুদ্র অর্থনীতিতে কতটা ভূমিকা রেখেছে, তারও একটি হিসাব করা হয়েছে। পর্যটন থেকে ২৫ ভাগ, সমুদ্র থেকে মাছ ধরা এবং অ্যাকুয়াকালচার ২২ ভাগ ও তেল-গ্যাস সম্পদ ১৯ ভাগ। ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে হিসাবটি করা হয়েছে। তবে ২০১৩ সালের শেষের দিকে সমুদ্রে বাংলাদেশের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু থেকে গ্যাস তোলা শেষ হওয়ার পর সমুদ্র অর্থনীতিতে তেল-গ্যাস খাতের ভূমিকা এখন শূন্য। সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ হওয়ার পর ২৬টি নতুন ব্লকে বিন্যাস করে এর মধ্যে ১১টি অগভীর ও ১৫টি গভীর সমুদ্রের ব্লক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর বহু সময় চলে গেছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। 

২০১৯ সালের সর্বশেষ তথ্যে বলা হচ্ছে, মাত্র চারটি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু একটি কূপও বাংলাদেশ খনন করতে পারেনি। বাকি ২২টি ব্লক স্থবির পড়ে রয়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উৎপাদন ও ভাগাভাগি চুক্তির আগে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে হবে কি হবে না সে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই আমরা এখনো আটকে আছি।  তবে ইতিবাচক তথ্য হলো ২০১৬ সাল থেকে ‘আরভি মীন সন্ধানী’ নামে সমুদ্র গবেষণা ও জরিপ-জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রের চিংড়িসহ তলদেশীয় ও উপরিস্থ মাছের জরিপের কাজ চলছে, যার কার্যক্রম সাগরের ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। আরো ইতিবাচক দিক হলো এরই মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। চীন ও জাপানও সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০২০ সালের মার্চে। বন্দর ও সংযোগ সড়কসহ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। প্রকল্প খরচের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। আর সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি ও চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে। এছাড়া পায়রা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় চীন-বাংলাদেশের যৌথভাবে তৈরি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও অনেক সম্ভাবনা বয়ে আনবে। যদিও কয়লা সংকটে পড়ে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তার পরও সব মিলিয়ে আশা করা যায়, কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এ সুনীল অর্থনীতি।

বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশ জাপান কীভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে? সে কথায় যাওয়ার আগে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে জাপানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসন্ধান করা যায়। প্রথমে দক্ষিণ এশিয়াকে জাপানের এশিয়া নীতির একটি পরিধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়া জাপানের কাছে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে প্রধান গুরুত্বের বিষয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে। তবে কিছু কারণে জাপান যৌথ উন্নয়নের বাহন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

প্রথমত, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলংকার মতো প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সহযোগিতা, এফডিআই, ঋণসহায়তা ও অনুদানের মাধ্যমে জাপান নিজেদের একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। জাপান এ দেশগুলোর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাই এ অঞ্চলে জাপানের উপস্থিতি জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্টের উদ্যোগ বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি এ শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বৃহত্তর অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এ অঞ্চলে উন্নত সংযোগ নিশ্চিত করাও জাপানের লক্ষ্য হতে পারে। জাপান এরই মধ্যে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে একটি নতুন কনটেইনার বন্দর নির্মাণে ২০ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে। দেশটি ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তৃতীয়ত, বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব বহন করে। কারণ সমুদ্রের দৃষ্টিকোণ থেকে বঙ্গোপসাগরকে আলিঙ্গনকারী ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও স্থলের দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান। তাই জাপানের উদ্যোগ বিগ-বি বিমসটেককে আসিয়ানের সঙ্গে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা শক্তিশালী আঞ্চলিক সংযোগ তৈরি করবে।

চতুর্থ, কারণ হলো অর্থনীতি, জ্বালানি, সংযোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অপ্রচলিত নিরাপত্তা সমস্যাগুলো, যা সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য গভীর আগ্রহের বিষয়। গভীর সমুদ্রের সম্পদ, পোর্টল্যান্ডের উন্নয়ন এবং এ অঞ্চলে আরো সংযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সুনীল অর্থনীতির গুরুত্ব জাপানকে উপসাগরজুড়ে একটি অপটিক ফাইবারসহ নির্ভরযোগ্য শক্তি ও যোগাযোগের মতো মৌলিক অবকাঠামো তৈরির আহ্বান জানাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের এ কৌশলগত উপাদানগুলো উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোর দৃঢ় সংহতি পারস্পরিক সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।

যেহেতু প্রথাগত ভূরাজনীতি নতুনভাবে রূপান্তর হচ্ছে, বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যারেনায় উপসাগর আবার কেন্দ্রীয়তা অর্জন করছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে ভারত, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলক অভিন্ন হয়ে উঠছে এবং তাদের মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্যভাবে একত্র হওয়ার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে।

বিগ-বি প্ল্যানে ভারতের, বাংলাদেশের লুক ইস্ট পলিসি এবং থাইল্যান্ডের লুক ওয়েস্ট নীতির জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। এটি বিমসটেক, আসিয়ান ও এমজিসির মতো বহুপক্ষীয় ফোরামের জন্যও উপকারী। তাই বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো প্রশমিত করা গেলে এক্ষেত্রে জাপানের সহযোগিতা নিশ্চিতভাবেই মিলবে বলে আশা করা যায়।

ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম: চেয়ারম্যান, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন