নির্বাচনের আগে শেষ একনেক সভায় রেকর্ড ৮২টি প্রকল্প উঠছে

ইয়াহইয়া নকিব

বর্তমান সরকারের মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) শেষ সভা হতে যাচ্ছে আগামীকাল। এ শেষ সভায় রেকর্ড ৮২টি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।

এর আগে নভেম্বরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর তফসিলের পর আইনি বাধা না থাকলেও রেওয়াজ হিসেবে সাধারণত একনেক সভা করা হয় না। এ হিসেবে এটা সরকারের শেষ একনেক সভা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র।

শেষ সময়ে এত বেশি প্রকল্প অনুমোদনকে বর্তমান অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) থাকা অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেয়া দরকার ছিল। সেখানে আরো প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে, যা এডিপির তালিকায় চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে কোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ হচ্ছে না। 

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রমতে, একনেক সভার জন্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নোটিস জারি করা হয়েছে, যেখানে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য ৪৪টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। আর মেয়াদ বৃদ্ধির তালিকায় রাখা হয়েছে আরো ছয়টি প্রকল্প। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয়ের প্রকল্পগুলো একনেক সভাকে অবহিত করা হয়। এমন প্রকল্প রয়েছে ৩২টি। সব মিলিয়ে মোট ৮২টি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।

মন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া ৩২টি প্রকল্পের মধ্যে ১৬টি আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের। ভৌত অবকাঠামো বিভাগের রয়েছে সাতটি। আটটি প্রকল্প কৃষি ও পানিসম্পদ বিভাগের। বাকি একটি শিল্প ও শক্তি বিভাগের। মূল ৪৪টি প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯টি প্রকল্প ভৌত অবকাঠামো বিভাগের। ১০টি প্রকল্প কৃষি ও পানিসম্পদ বিভাগের। আর্থসামাজিক বিভাগের সাতটি এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের রয়েছে আটটি প্রকল্প।

এর আগে এত বেশিসংখ্যক প্রকল্প উত্থাপনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও বেশ কয়েকটি সভায় গড়ে ৩৮-৪০টি পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেসব অনুমোদন পাওয়ায় সব প্রকল্পে যথাযথ অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়নি। তাই তখন অনুমোদন পাওয়া অনেক প্রকল্পের কার্যক্রম এখনো শেষ করা যায়নি। 

সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর চলতি অর্থবছরের চতুর্থ একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ২০টি প্রকল্প। সে হিসেবে এবার চার গুণের বেশিসংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এডিপি তালিকাভুক্ত থাকায় মূল কাজ না এগোলেও এসব প্রকল্প চালিয়ে নিতে বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ দিতে হয়। কিন্তু প্রকল্প বেশি হওয়ায় কোনোটিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্প সময়মতো শেষ হচ্ছে না। এখানে অপচয়ের একটি সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’ তাই নতুন প্রকল্প যুক্ত না করে বরং বিদ্যমানগুলো শেষ করার তাগিদ দেন তিনি। 

এদিকে নির্বাচনের আগে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেয়াকে আবহমানকালের রেওয়াজ বলছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

তিনি বলেন, ‘‌সবসময় শেষ দিকে একটু বেশিসংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন পেয়ে থাকে।’ বেশ কয়েকটি একনেক সভা না হওয়ায় প্রকল্প সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানান তিনি। আর অবরোধ বা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে একনেক সভা পিছিয়ে দেয়ার আশঙ্কাও নাকচ করেছেন মন্ত্রী।

তবে তফসিলের পর একনেক সভা করতে আইনি কোনো বাধা না থাকলেও সমালোচনা এড়াতে এমনটা করা হয় না বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন আল রাশিদ।

তিনি বলেন, ‘‌নির্বাচনের আগে প্রকল্প পাস হলে অনেকে লোক দেখানোর জন্য প্রকল্প পাস করার অভিযোগ করতে পারেন।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বর্তমান সচিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন