সরকারের সহায়ক নীতির কারণেই বেসরকারি খাতের উন্নয়ন হয়েছে

১৯৭১ থেকে ২০২২ সালে আমরা পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছি। যেসব দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে তারা কেউই সেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারেনি। আমরা স্বাধীনতার সময় কৃষিপ্রধান ছিলাম। শিল্প-কারখানা ছিলই না। যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানিরাই তার মালিক ছিল। আমরা কোনোভাবেই কোনো কিছুতে ছিলাম না। বঙ্গবন্ধু যখন এলেন তখনো চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, বন্যা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। এসব মোকাবেলা করতেই বঙ্গবন্ধুর তিন বছর চলে গেছে। কিন্তু তার একটা পরিকল্পনা ছিল।

যেখানে আমাদের পুরোটাই ছিল কৃষিভিত্তিক, সেখানে আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। বাকিটা বেসরকারি খাত, শিল্প খাত। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে খাদ্যনিরাপত্তা ঠিক রেখে কীভাবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। একই সঙ্গে এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন করা যায়। নুরুল কাদের খান ছিলেন আমাদের পোশাক শিল্পের স্থপতি, পথিকৃৎ। তিনিও বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ছিলেন। তিনি সেই সময় নতুন একটা ধরন নিয়ে এলেন। আশির দশকের শুরুতেই আমাদের পোশাক খাতের শুরু হলো।

প্রথমে আমরা পাট, চা ও চামড়ার ওপর নির্ভর ছিলাম। তাও ফিনিশড চামড়া ছিল না। এ তিনটা থেকে আস্তে আস্তে অনেকগুলোতে এগিয়েছি। এখন দেখেন আমরা পোশাক খাতে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের মতো রফতানি করে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হয়ে গিয়েছি। আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য এটা একটা রেভল্যুশন হয়েছে। এটার পরিকল্পনা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকেও আছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকেও আছে। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সরকারের নীতি যদি ব্যবসা সহায়ক না হতো, বন্ড সুবিধা যদি না দিত, ব্যাক টু ব্যাক সুবিধা যদি না দিত তাহলে এসব হতো না। এবার যেমন বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে রফতানিনির্ভর শিল্প-কারখানার জন্য ১২ শতাংশ আর গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ করা হলো। সরকারের এসব সহায়ক নীতির কারণেই বেসরকারি খাতের উন্নয়ন হয়েছে।

রফতানি নীতি তৈরি করা হয়েছে তিন বছরের জন্য। ২০২১-২৪ সালে রফতানি লক্ষ্য দেয়া হয়েছে ৮ হাজার কোটি ডলার। এ বছর ৩৫ শতাংশ গ্রোথ হয়েছে। তার মানে ২০২২-২৩-এ করা যাবে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার কোটি ডলার। ২০২৩-২৪-এ যদি আবার ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার হয় তাহলে ৮ হাজার কোটি অতিক্রম করে যাচ্ছে। তার মানে রফতানি নীতিতে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তা খুব সহজে অর্জন হয়ে যাবে। মহামারী অবস্থার পরে পশ্চিমা বিশ্ব একটি দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। তারা চীনের ওপরও নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। এটা স্পষ্টত দেখাই যাচ্ছে। এসবের অনেক কারণ আছে। তবে বড় একটি কারণ হচ্ছে ভৌগোলিক রাজনীতি। তাহলে তারা এখন কোথায় যাবে? ভিয়েতনামে যাবে, কম্বোডিয়ায় যাবে। কম্বোডিয়ার এখন আর আগের মতো অবস্থান নেই। তার পরে আসবে ভারতবর্ষে। আমাদের এখানে আমরা একটা ইউনিক ওয়ার্ক ফোর্স তৈরি করেছি। বলা যায় সেটা একটা রেভল্যুশন হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, লোকজন কাজ করতে চায়। এখন আমাদের সক্ষমতাও আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত আর বাংলাদেশ ছাড়া একটি দেশেরও উৎপাদন সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানে কাজের পরিবেশ নেই। শ্রীলংকার ভঙ্গুর অবস্থা, নেপাল উৎপাদনশীল না।

মানে আমাদের যে স্থিতিশীলতা আছে, এটাও একটা বড় ব্যাপার। আমি মনে করি, সরকার যদি সেভাবে উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে আমাদের পলিসিতে যে ৮ হাজার কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হচ্ছে সেটা প্রথমবারেই অতিক্রম করে যাবে। এখন সোশ্যাল হারমনিটা মেইনটেইন করে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো রকমের মানবসৃষ্ট সমস্যা তৈরি করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। তার পরও যদি কিছু ঘটেই যায়, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

আমরা বিলাসবহুল পণ্য তৈরি করি না। সবই প্রয়োজনীয় জিনিস। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলো তো লাগবেই। তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সেসব নিতে হবে। তাছাড়া আমরা ২০০ ডলারের শার্ট বিক্রি করি না, করি ২০ ডলারের শার্ট। সেজন্য অবশ্য আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাব আমাদের এখানে নাও পড়তে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন