প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস পণ্য

চীনের বাইরে উৎপাদন স্থানান্তর সহজ নয়

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০০০ ও ২০০১ সালকে চীনের শিল্প বিকাশের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করেন বিশ্লেষকরা ছবি: গিজচায়না

প্রযুক্তি ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে চীন সিদ্ধহস্ত। বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে দ্রুত সময়ের মথ্যে পণ্য উৎপাদনে চীনই বড় কোম্পানিগুলোর ভরসার জায়গা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলও চীনেই আইফোন উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কী উৎপাদন একেবারেই সম্ভব নয়, এমন প্রশ্নও উঠেছে। টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এর উত্তর দিয়েছিলেন প্রয়াত স্টিভ জবস। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা অনেকটাই অসম্ভব।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এলেও এখনো সে পরিস্থিতি বদলায়নি। কেন চীন থেকে উৎপাদন কার্যক্রম বাইরে নিয়ে যাওয়া সহজ নয় কিংবা কেন পশ্চিমে চিপ তৈরির কার্যক্রম সম্প্রসারণ সফল হবে না, তা বোঝার জন্য কিছুটা পেছনে তাকাতে হবে। শুরুতেই জানা জরুরি যে কীভাবে চীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সত্তরের দশকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের শাসনামলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।

২০০০ ২০০১ সালকে চীনের শিল্প বিকাশের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করেন বিশ্লেষক গবেষকরা। আশির দশকের শুরুতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর চীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করে দেশটির সস্তা শ্রম। কম মূল্যে শ্রম মুনাফা অর্জনের বিস্তৃত সুযোগের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম বিস্তৃত হয়। তখন কোনো পক্ষই বিরোধিতা করেনি। কারণ সবাই সন্তুষ্ট ছিল। স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্য সব উন্নত ইলেকট্রনিকসের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ পরস্পর নির্ভরশীল সাপ্লাই চেইন নিয়ে একটি শিল্প কৌশল তৈরি করেছে। অঞ্চলে সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদন হওয়ায় ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এক্ষেত্রে শেনজেন শহর একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। সময়ের গতিপথ ধরে চীনা শিল্প এগিয়েছে। শুধু সেলফোন সরঞ্জাম তৈরি নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা অগ্রসর হয়েছে। মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো। নকিয়া, সিমেন্স, এরিকসনের মতো ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো শুরুতে নিরাপত্তা সুরক্ষার বিষয়গুলোকে কোনো সমস্যা বলে মনে করেনি। তাছাড়া তখন চীনা কোনো নেটওয়ার্কও তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের ছাড়িয়ে চীনের হুয়াওয়ে বিশ্ববাজার দখল করে নিচ্ছে। যা অনেকেই পছন্দ করছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারাই প্রথম চীন থেকে উৎপাদন কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রচারণা শুরু করে। কিন্তু কাজটি খুব একটা সহজ হবে না। চীন থেকে সমগ্র শিল্প উৎপাদন কার্যক্রম সরানোর প্রক্রিয়াতেই অনেক কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাবে। কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো রাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে টিকে থাকবে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে পদক্ষেপ গ্রহণের বিপরীতে পর্যাপ্ত সম্পদ সংস্থান আছে কিনা। তাছাড়া রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন