উৎসাহবান্ধব নীতিমালাই এলপিজি খাতকে এগিয়ে নিতে পারে

আজম জে চৌধুরী , প্রেসিডেন্ট, লোয়াব চেয়ারম্যান, ইস্ট কোস্ট গ্রুপ লিমিটেড

প্রতিটি শিল্প খাতের মতো এলপিজি খাতও এখন বড় হচ্ছে। প্রতিনিয়ত পণ্যটি ব্যবহারের নতুন নতুন খাত তৈরি হচ্ছে। টেকসই বাজার গড়তে বাজেটে এলপিজি অপারেটরদের কোনো প্রত্যাশা আছে কিনা।

প্রত্যাশা তো থাকবেই। এলপিজি একটি পরিবেশবান্ধব প্রডাক্ট। সেজন্য সরকার এতদিন পণ্যটি ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে আসছে। খাতে ভ্যাট-ট্যাক্স এতদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। খাতে ভ্যাট এতদিন ছিল শতাংশ। আইএমএফের কন্ডিশন বাস্তবায়ন করতে হলে হয়তো ভ্যাটের পরিমাণ ১৭ শতাংশ হতে পারে। ভ্যাট বাড়লে এলপি গ্যাসের দাম হয়তো আরো বেড়ে যাবে। খাতকে উৎসাহিত করতে উৎসাহবান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে হবে। তাহলে এলপিজি খাত এগিয়ে যাবে। বাজেটে ভ্যাটসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সরকার নমনীয় হতে পারে। খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বাজেটে উৎসাহমূলক কিছু প্রত্যাশা করেন অপারেটররা।

এলপি গ্যাসের দাম অস্থিতিশীল। সব জ্বালানির দামে এখন পরিস্থিতি। সামনে দাম আরো অস্থিতিশীল হলে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্যটি গ্রাহক কিনতে পারবে কিনা।

দুটি কারণে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এলপি গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের পাশাপাশি গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলপি গ্যাসের দামও বেড়েছে। অঞ্চলে এলপি গ্যাসের সিপিটা মূলত নির্ধারিত হয় সৌদি আরামকো কোম্পানির মাধ্যমে। তারাই মূলত সিপি নির্ধারণ করে। এই সিপিটা যখন ৭০০-৮০০ ডলার ক্রস করে, তখন আমাদের দেশে এলপি গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ এলপি গ্যাস কিনতে পারে না। দ্বিতীয়ত হলো ট্যাক্স আহরণ। বিশেষত অভ্যন্তরীণ আর্থিক অনেক ধরনের সংকট তৈরি হওয়ায় খাতে ট্যাক্স সুবিধাটা দেয়া সরকারের জন্য এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ডিজেলে ভর্তুকি প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে সরকার। গ্যাসেও পর্যায়ক্রমে উঠে যাবে।

এলপি গ্যাসের দাম সাশ্রয়ী করতে কোনটি এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?

এলপিজি ব্যবসাটা ১৫-২০ বছর আগে দেশে শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এলপিজি ব্যবসার প্রসার গত পাঁচ বছরে। কয় বছরে এলপিজি খাতের অবকাঠামো খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশে এলপিজি অবকাঠামো, গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হয়ে যাবে। তখন সাশ্রয়ী প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে। তখন গ্রাহক সাশ্রয়ী মূল্যে হয়তো পণ্যটি কিনতে পারবে। সিলিন্ডার থেকে গ্রাহক এবং কোম্পানিগুলো এখন সরে আসছে। ভবিষ্যতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে সরবরাহ না দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ হবে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো এলপিজি গ্যাসের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা। ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হলে সরকারের থেকে কোনো সহায়তা দরকার কিনা।

আমি মনে করি, এখানে সরকারের বড় ধরনের কাজ করার সুযোগ নেই। সরকার এখানে পলিসি রিফর্ম করতে পারে। তাছাড়া এলপিজি পাইপলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হলে সুনির্দিষ্ট একটা পলিসি বা গাইডলাইন থাকা দরকার। যেমন কোনো একটি জেলায় এলপিজি পাইপলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাইলে, সেটি সরকার করবে নাকি বেসরকারি খাত থেকে করবে, তার একটি নির্দেশনা গাইডলাইন করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে দ্রুত এটি ডেভেলপ হচ্ছে। মোটা দাগে বলতে গেলে ধরনের অবকাঠামো গড়ে তুলতে হলে একটা পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সরকার যদি এলপিজি গ্যাস সরবরাহে একটা পাইপলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে তাহলে এলপিজি সাপ্লাইয়ে সরকারের কোনো অর্থ খরচ হবে না। বেসরকারি খাত এসব পাইপলাইনে এলপিজি সরবরাহ করতে পারবে।

এলপিজি সিলিন্ডারে ভর্তুকির বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবেন কিনা।

ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি চাহিদার চেয়ে এখন দ্বিগুণ সুবিধা চায়। ফলে সরকার ইমপোর্ট ট্যারিফ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতদিন বিদেশ থেকে সিলিন্ডার আমদানি করতে হতো। এখন সেটি আমদানি করা কঠিন হবে। বর্তমানে দেশের বাজারে যে সিলিন্ডার রয়েছে তা আমাদের চাহিদা পূরণ করে। পাশাপাশি সিলিন্ডার এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এলপিজি সিলিন্ডারের জন্য এখন আর আমদানিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে না যাওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে ডলারেরও সাশ্রয় হবে। শুধু স্টিল আমদানি হতে পারে। কারণ এটি আমাদের কাঁচামাল।

দেশে ডলার সংকট প্রকট। এলপিজি অপারেটররা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, তারা ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না। কারণে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি মুদ্রার বিনিময়ের কারণে তাদের আর্থিক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকের সঙ্গে একধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিরসন কীভাবে হবে?

দেশে বর্তমানে ২৬টি অপারেটর খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। পৃথিবীর কোনো দেশে পরিমাণ অপারেটর নেই। মূলত অপারেটর আছে - জন। এটা ক্যাপিটাল ইনটেনসিভ। এখানে সবাই নেমে গেলে তো ব্যবসা হবে না। এখন এলসি সমস্যা হচ্ছে ছোট ছোট অপারেটরের। যেসব কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো ভালো রয়েছে, তাদের ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে না। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক রয়েছে যেখান থেকে এলসি করলে বিদেশ থেকে কনফারমেশন দেয় না। ধরনের ব্যাংকগুলো থেকে এলসি হলে কনফারমেশন পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে লাখ দশ হাজার টন। এর মধ্যে আমরা নিজেরাই নিয়ে আসি ৪৫-৫০ হাজার টন। এছাড়া ভারতের ওড়িশার ধারমা পোর্ট থেকে একটি কোম্পানি ৪৫ হাজার টন পাঠাচ্ছে। সলিড ক্রেতারা এলপিজি কিনছে। বাকি ২০-২৫ হাজার টনের মধ্যে আই গ্যাসসহ অনেকেই আমদানি করছে। তিন থেকে পাঁচ হাজার টন অপারেটররা এলসি জটিলতায় পড়ছেন বেশি।

বিইআরসি প্রতি মাসে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করলেও বাজারে এই দামে গ্যাস পাওয়া যায় না। এছাড়া কোম্পানিভেদে সিলিন্ডারে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটা গ্রাহকের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন আপনারা?

বর্তমানে বিইআরসি এলপি গ্যাসের সব খরচ হিসাব করে দাম নির্ধারণ করছে। নির্ধারিত দামে কে বিক্রি করছে না ধরনের কোনো তথ্য নেই। সবাই এই দামে বিক্রি করছে। বেশি দামে বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। বরং কোনো কোনো অপারেটর কম দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছে। এলপি গ্যাসের দাম ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর সিপির বিষয়টি ভালোভাবে ফলো করে। তারা এটা দেখেই বুঝতে পারে আগামী মাসে এলপি গ্যাসের দাম কত ঘোষণা হতে পারে।

দেশে এলপি গ্যাসের বাজার কোন দিকে যাচ্ছে। সামনে পণ্যটির ভবিষ্যৎ কী?

এলপি গ্যাস এতদিন বাসাবাড়িতে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু এটার সেকেন্ড মার্কেট হলো রেস্টুরেন্ট খাবারের দোকান। তাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রাইসিং সমস্যা নেই। এটা তারা নির্ধারিত মূল্যেই কিনতে পারছে। এছাড়া শিল্পে এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। শিল্পে গ্যাসের প্রেসারজনিত সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের পাইপলাইনে এসএনজি অ্যাড করে দিলেই গ্যাসের সঙ্গে মিক্সড হয়ে প্রেসার বেড়ে যাবে। ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার বাড়ছে।

 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু তাহের

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন