আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দেয়া হয়েছে

মো. গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া

বর্তমানে দেশের আর্থিক খাতে কিছুটা তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে?

এনবিএফআইগুলোর ক্ষেত্রে তারল্য সংকট শুরু আরো আগেই ২০১৯ সালে। সময়ে খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বিষয়টি সামনে আসায় গ্রাহকের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। সম্প্রতি সামষ্টিক অর্থনীতির সংকটের কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। কারণে আমরা এখন আর সেভাবে ব্যাংক থেকে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের আমানতের উৎস হচ্ছে দুটি। একটি হলো ব্যাংক খাত। আরেকটি হচ্ছে নন-ব্যাংক খাত যেমনবীমা কোম্পানি, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি। এখন ব্যাংক নিজেই সমস্যায় রয়েছে। আবার কিছু কিছু এনবিএফআই ব্যাংকের আমানত ফেরত দিতে না পারার কারণে বর্তমানে ব্যাংকগুলো এনবিএফআইকে টাকা দিতে আগ্রহী নয়। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপত্র খুলতে গিয়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। কারণে তাদের কাছ থেকেও সেভাবে তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণে আমাদেরকে ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারীদের দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে।

ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারীদের আকৃষ্ট করতে কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?

আমরা বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি আমানত সংগ্রহের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যেমন আমাদের মিলিওনিয়ার স্কিম রয়েছে। আমাদের ডিপিএস স্কিম রয়েছে তিন বছর-চার বছর মেয়াদের। এটি আমাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতি মাসে যাতে কোটি টাকার মতো দীর্ঘমেয়াদি আমানত সংগ্রহ করার।

আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএলএফসিএ কী ভূমিকা রাখছে?

বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে আমরা কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে এনবিএফআইগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করা এবং প্রসার-প্রচারণামূলক কর্মসূচি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এনবিএফআই মেলা আয়োজনের মাধ্যমে খাতটির ব্র্যান্ডিয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করব। আইন বিধি-বিধানের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন যাতে নিশ্চিত হয় সে পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি আমরা সব এনবিএফআইগুলোকে বলেছি যাতে করে ব্যক্তিশ্রেণীর কোনো আমানতকারী তাদের গচ্ছিত অর্থ নিতে গিয়ে ফেরত না আসে। এতে করে খাতটির প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের ক্ষেত্রে হয়তো অনুরোধ করে সময় বাড়ানো যায়। কিন্তু ব্যক্তি শ্রেণীর ক্ষুদ্র আমানতকারী যারা রয়েছেন তাদের টাকার পরিমাণ খুব বেশি নয় ১০ লাখ বা ২০ লাখ এমন সংখ্যাই বেশি। তাই তারা চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আমানত ফেরত দিতে পারে সেজন্য জোর দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের হার কমানোর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ জোরদার করা হবে। এসব ঋণ আদায় হলে প্রতিষ্ঠানগুলোয় তারল্য সরবরাহ বাড়বে। দেশের রফতানি আয় রেমিট্যান্স পরিস্থিতির সামনে আরো উন্নতি হবে বলে আশা করছি। এতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেও আমানতের পরিমাণ বাড়বে। বছর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ ঠিক রাখা।

 

মো. গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইআইডিএফসি লিমিটেড

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন