তিন থেকে আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সংস্কার করা সম্ভব

হাসনাত কাইয়ুম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, সাতদলীয় জোটগণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সদস্য। রাষ্ট্র সংস্কার, রাজনৈতিক সংকট, সুশাসন উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হতে পারে?

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি প্রচণ্ড আশাবাদী। কয়েক বছর আগে বলেছিলাম একটা সময় মানুষ প্রশ্ন করবে রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে না বিপক্ষে। আজকে আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসও রকম। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব হয়েছে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা প্রস্তাব হয়েছে, ১৯৭০ সালে স্বাধীন হওয়াটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। ২০২২ সালে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব মানুষের সামনে আসছে। তিন থেকে আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সংস্কার হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সংস্কারের জন্য আপনাদের পদক্ষেপগুলো কী?

রাষ্ট্রের সাতটি জায়গায় আমরা সংস্কার করব। এগুলো করতে পারলে পুরো রাষ্ট্রটি স্বাভাবিকভাবেই সংস্কার হয়ে যাবে।

প্রথমত নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার করব। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটা নেই। এটি সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করা আছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে যারা সরকারে থেকে নির্বাচন করেছে তাদেরকে কেউ ভোটে হারাতে পারেনি। সাংবিধানিকভাবে ১০৩ () দিয়ে এটাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে যে রাজনীতি একটা বল প্রয়োগের বিষয় হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে কখনো এখানে সরকার বদলানোর কোনো ব্যবস্থা সংবিধানে রাখা হয়নি। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা বদলের মাধ্যম হিসেবে প্রথমত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এর পরই সংসদকে মুক্ত করতে হবে। কারণ আইন বিভাগ রকম আইন বানাতে পারে যার মাধ্যমে পুলিশ সন্দেহের বসেই ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারে কিংবা রকম আইন বানানো যায় যে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এক টাকার জিনিস আমি এক টাকা নাকি এক হাজার টাকায় কিনব সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আদালতে যাওয়া যাবে না। রকম অন্যায্য এবং জনস্বার্থবিরোধী আইন করতে পারার কারণে আইনসভার সদস্যদের কোনো ক্ষমতা নেই। তারা দলীয় প্রধানের কাছে দায়বদ্ধ। আইনগুলো দিয়ে চলে পরীক্ষা করে বিচার বিভাগ। এখন পর্যন্ত আমরা যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের জামিনের জন্য যাই, তাহলে সে জামিন দিতে পারে না। কারণ আইন তাকে বলে রাখছে জামিন দিতে পারবা না। স্বাধীনভাবেই এটি প্রত্যেককে রকম অন্যায় আইনের পক্ষে রায় দিতে বাধ্য থাকবে।

বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ জিনিস হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের বেলায় কোনো ধরনের যোগ্যতার মানদণ্ড ঠিক করা নেই। কেবল শাসক দল যে নিয়োগ করবে এবং ওই লোকটা যে আইনজীবী হিসেবে দশ বছর অথবা কোনো একটা অধস্তন আদালতে দশ বছর চাকরি করেছে এটুকু শর্ত পূরণ করলেই আদালত তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেবেন। স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় সরকার হিসেবেই আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার বলে আসলে কিছু নেই। বাংলাদেশে যেটা লোকাল গভর্মেন্ট সেটা হলো কেন্দ্রীয় শাসনের একটা লোকাল রূপ। আমরা এটাকে সরকার করতে চাই, বিভাগ নয়। একই সঙ্গে ৭০ ধারার ফ্লোর ক্রসিং ছাড়া বাকি সব স্বাধীনতা আমরা দিতে চাই। আমাদের এগুলো কোনো নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে আমরা অর্থনৈতিক একটা সংস্কার করতে চাই। সেটা এমন যে ধরুন সরকার কোটি টাকা বাজেট করল। বাংলাদেশের যদি এক লাখ গ্রাম ধরি তাহলে সে প্রতি গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের গ্রামগুলো তো দেড় কোটি টাকা খরচ করে না, বরং মেগা প্রজেক্টের নামে সে বিশাল একটা খরচ ধরে সে লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কিন্তু খরচের সময় বিভিন্ন খাতে ভাগ করে দেয়। এমনভাবে ভাগ করে যেখানে টাকাটা খরচ করার কোনো জায়গা নেই। ওইখান থেকে তারা টাকাটা বিভিন্ন রাজনৈতিক আমলাদের মাধ্যমে তার হাতে নেয়। এটা তারা এখানে অপচয় করে, বাকিটা পাচার করে দেয়। আমরা আইন বদলে দেব। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টক্রমে যে আইন করে সেটা পাল্টে দেব। আমাদের জনপ্রতিনিধি থাকবে, বিরোধী থাকবে তাদের চাহিদামতো।

সর্বশেষ বিষয়টি হলো মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকারগুলো হয়েছে ঔপনিবেশিক আইনের সাপেক্ষে। এভাবে ভাবলে একটাও মৌলিক অধিকার পাওয়া যাবে না। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারই যথেষ্ট নয়। মানুষকে মানুষ ভাবলে সেখানে বিনোদন প্রয়োজন। সুতরাং আমরা মৌলিক অধিকারের আওতা বাড়াতে চাই।

সংস্কারের জায়গাটা এমন যে প্রথম পাঁচ বছরে আমরা শিক্ষা স্বাস্থ্যটা পারব। পরের পাঁচ বছরে অন্য দুটি আনব, কিন্তু আমরা শুরু করতে চাই। 

আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে তরুণদের কীভাবে যুক্ত করবেন বলে ভাবছেন?

তরুণরা নিজেরাই যুক্ত হওয়ার জন্য জায়গা খুঁজছে। তারা নিজেদের মতো নামবে আমরা তাদের নেতৃত্ব দেব। বাংলাদেশের ছাত্ররা ভাষা আন্দোলন করেছে, দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা তাদের নেতৃত্ব দিতে গেলে এটি ঘটবে না। তারা ঘটাতে চাইলেই এটি ঘটবে। 

কৃষিকাজ কৃষকের জন্য এখন অলাভজনক অবস্থায় চলে গেছে। কৃষকের অবস্থার উন্নয়নে আপনারা রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?

কৃষক নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। মুহূর্তে কৃষকের বিষয়টি সামনে আনছি না, কারণ এখন সব বিষয় নিয়ে এলে মূল বিষয় আড়ালে পড়ে যাবে। কার্যকর স্থানীয় সরকার গঠন করতে পারলে কৃষকের সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবেই সমাধান হয়ে যাবে। কৃষিকে কৃষি হিসেবে নয় সংস্কৃতি হিসেবে দেখতে চাই। 

সুশাসন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থাটা কেমন এবং দুটি বিষয়ে বাংলাদেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন?

আমাদের এখানে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা না থাকার ফলে উন্নয়ন সুশাসন দুটিই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানব সম্পদের যে উন্নয়ন হওয়ার কথা সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নেই, কথা বলার কোনো জায়গা নেই। সর্বত্র ভয়ের সংস্কৃতি চলছে। একটা জাতিকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছে। আমরা দুটিকেই গুরুত্ব দেব। মানুষকে সবার সামনে রেখে যা করা প্রয়োজন সবই করব। 

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে কতটুকু অবদান রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

এখানে দুই ভাবে প্রভাব তৈরি হয়। কিছু মানুষ দ্রুত টাকা অর্জন করে। একই সঙ্গে দ্রুতই তা পাচার করে দেয়। অতএব উন্নয়ন যেটা হবে এটা পাচারের জন্য, লুণ্ঠনের জন্য হয়। কাঠামোয় প্রকৃতিবান্ধব, জনবান্ধব কোনো উন্নয়ন সম্ভব না। যেমন রূপপুরের মতো একটা জায়গায় আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চৌদ্দ গুণ বেশি টাকা দিয়ে এটি করা হয়েছে। সেটার সুদহার চার শতাংশেরও বেশি। তারপর তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটাকে বাড়াতে পারবে। এটা এমন এক ব্যবস্থা যেটা চলতে থাকে। ভুল হয়েছে বলে সেটাকে ভাঙে। জনগণের টাকা দিয়ে সেটা পরিশোধ করে কিন্তু যারা ভুল করেছে তাকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। এক হাজার টাকার একটি প্রজেক্ট শেষ হয় তেরো হাজার কোটি টাকায়। 

গত ৫১ বছরে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের কয়েকটি সেক্টরের বিকাশ ঘটেছে। আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেয়েছি। ইউরোপের পতন এবং এশিয়ার উত্থানের সুযোগটাও পেয়েছি। কৃষি খাত থেকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছি। রেমিট্যান্স গার্মেন্ট সেক্টর থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি ডলার পাচ্ছি। একটা জাতির ক্যাপিটাল বা পুঁজি তৈরি হওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা সঞ্চয় হওয়ার পরিবেশ সেটাই গত ৫০ বছরে তৈরি হয়েছিল। সময়ই সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হয়েছে। তখনই বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। পাচার করার পর এরা যদি বিনিয়োগও করত তাহলেও বাংলাদেশ উঠে যেত, কিন্তু দেশে কোনো বিনিয়োগ হয়নি। গত ২০ বছর আমরা আবার সোনার বাংলা হতে পারতাম। ফলে স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা ক্রমান্বয়ে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছি। আমরা অধিকতর উৎপাদন করছি, অধিকতর শ্রম দিচ্ছি, কিন্তু আমাদের ভোগ করার ক্ষমতা ওরা লুটে নিচ্ছে। ৫০ বছরে লুটপাটের উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। 

আপনার মতে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটগুলো কী?

ক্ষমতাকে মানুষের কাছে নিতে না পারাটাই মূল সংকট। অন্য একটি সংকট হলো রাজনীতি করার জন্য নৈতিক জোটের অনুপস্থিতি। ২০১৪ সালের পর থেকে যে রাজনীতি চলছে তারা আসলে রাজনৈতিকভাবে এখানে এক ধরনের শিক্ষা দিচ্ছে, যা মানবিক গুণাবলিকে নষ্ট করে ফেলছে। 

আইএমএফসহ অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণের বোঝা আমাদের অগ্রগতির জন্য কী ধরনের বাধা তৈরি করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশে যারা আসবে তারা একটি বিপজ্জনক সময় জায়গায় আসবে। এখন প্রতিনিয়ত আরো অধিকতর বিপদের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটাকে ঠেকানোর জন্য দেশকে হাতে নেয়া ছাড়া পথ নেই। ২০২৪ অথবা ২০২৫ সাল থেকে আমরা ভয়াবহ ঋণের মধ্যে আবদ্ধ হব। রকম একটা সময় আসবে যখন আবার কিস্তি পরিশোধ করার জন্য ঋণ নিতে হবে। অপচয় বা অন্যান্য সমস্যাকে বন্ধ করার মাধ্যমেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটা সম্ভব। 

গণতন্ত্র মঞ্চে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্য কী? জোটে যোগ দিয়ে আপনাদের আদর্শের কতটুকু প্রতিফলন হয়েছে?

গণতন্ত্র মঞ্চে যোগ দেয়ার মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে আমাদের পরিসর থেকে বাড়িয়ে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া। এখন পর্যন্ত আশি ভাগ সফল হয়েছি বলে আমি মনে করি। 

সাধারণত ছোট দলগুলো সমজাতীয় আদর্শের দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে। এর পরও সে জোট বেশি দিন টেকে না। কিন্তু আপনাদের বেলায় বিষয়টা ভিন্ন। এভাবে ভিন্ন আদর্শ মিলে জোট গঠন করা, আস্থা এবং ভবিষ্যৎ টেকসইটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমাদের জোটে বিভিন্ন বয়স, আদর্শের মানুষের সম্মিলন ঘটেছে। এটিই আমাদের দরকার। এটিই টেকসই হবে। কারণ বাংলাদেশকে তারা কৃত্রিমভাবে বিভক্ত করেছে। যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে, নারীবাদী নাকি নারীবাদী না, আস্তিক-নাস্তিক, হিন্দু-হিন্দু না, পাহাড়ি-সমতলের, জিহাদি রকম অসংখ্য বিভাজন রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে। সেই বিভাজনগুলো হ্রাস করার জন্য আমরা রকম একটি মডেল করতে চাই যেখানে দেশের সব ক্ষেত্রের মানুষ তাদের সংকটের সময় এক হতে পারে। এটি বাংলাদেশের একটি ভবিষ্যৎ মডেল যেখানে সব ধর্মের, সব পেশার মানুষ কল্যাণমূলক, মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একসঙ্গে থাকবে। 

যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সম্পর্কে আপনার কাছে কিছু শুনতে চাই?

এখন পর্যন্ত ভালো। এরই মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটির একটি মিটিং হয়েছে। সবাইকে আন্তরিক আগ্রহী মনে হচ্ছে। 

বিএনপির সঙ্গে জোটে না গিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়ার কারণ কী? নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি?

বাংলাদেশের দুর্যোগের জন্য যারা যারা দায়ী এদের মধ্যে বিএনপির একটি বড় ধরনের লিগ্যাসি আছে। ৫০ বছরের অপকর্মের অত্যন্ত ১৫ বছরের দায় তাদের। এখন তারা পরিবর্তন হতে চায়। তারা কি আসলে পরিবারতন্ত্রের বাইরে আসতে চায়, দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে, সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামোর পরিবর্তন চায়, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে? এগুলো না হলে ওই ধরনের ঐকমত্য হতে পারে না। একটা ঐক্য হতে পারে যে আমরা সবাই একই পথে হাঁটছি সেখানে একটি বড় পাথর বা বড় গর্ত আছে, সেটাকে ডিঙ্গিয়ে যাওয়ার ঐকমত্য হতে পারে। সেটাই হলো যুগপৎ। বিএনপি যদি প্রমাণ করে যে তারা জনগণের পক্ষে আসতে চায় এবং তাদের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনে তাহলে নিশ্চয়ই ঐকমত্য হতে পারে।

বিএনপির রাজনীতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আমাদের রাজনীতি হলো ইলেকশন প্লাস। আমরা নির্বাচন চাই। তবে এটি একটি গেটওয়ে মাত্র। 

আপনারা কোন প্রেক্ষাপট থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছেন?

রাষ্ট্রের ন্যূনতম গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলো আমরা সংস্কার করতে চাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের ৫০ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা সেখানে দেখছি যে রাষ্ট্রটা ক্রমাগত একটার পর একটা সংকটে পড়ছে। বিভিন্ন ফর্মে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু কোন জায়গাটার জন্য আন্দোলন সেটি নির্দিষ্ট করা হয়নি। আমরাই প্রথমবারের মতো সমস্যার কারণ সমাধান নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছি। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রচিন্তা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছিলাম। তখন আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশের সংকটগুলোকে চিহ্নিত করে এগুলোর সমাধান কী হতে পারে সেগুলো জাতির সামনে তুলে ধরা। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো এটিকে বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোগ নেবে, কিন্তু দলগুলো আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। সেজন্য আমরা বাধ্য হয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন