অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে অটল ওপেক ও এর মিত্র জোট ওপেক প্লাস। আগের মতোই মাসে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাবে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর এ জোট। ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোববার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা) কার্যকর হওয়ার একদিন আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিল ওপেক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ওপেক প্লাস জানায়, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত অক্টোবরেই প্রতি মাসে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বিগত দিনগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজার অংশীজনদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল।
এদিকে ওপেকের এমন সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল আইসিই ফিউচারসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের ফেব্রুয়ারি সরবরাহ চুক্তির দাম দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৬ ডলার ২৮ সেন্ট। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮০ ডলার ৬৮ সেন্টে।
২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অর্থনীতিগুলোয় স্থবিরতা নেমে আসে। ধস নামে জ্বালানি তেলের চাহিদায়। ব্যাপক দরপতন দেখা দেয়া পণ্যটির বাজারদরে। এ পরিস্থিতিতে ওই বছরের এপ্রিলে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক প্লাস। ওই সময় প্রতি মাসে দৈনিক এক কোটি ব্যারেল করে উত্তোলন কমাতে একমত হয় জোটের সদস্যরা। তবে ২০২১ সালের শুরু থেকেই করোনা পরিস্থিতি শিথিল হতে শুরু করলে বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের চাহিদা। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় জোটটি।
এ বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার আশঙ্কাজনক বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। এতে আবারো বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা কিংবা স্থবিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে কমতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। এ কারণেই ওপেক প্লাস আবারো উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে হামলার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি রাশিয়া যাতে যুদ্ধের ব্যয় বহনের প্রধান উৎস হিসেবে জ্বালানি তেল থেকে প্রাপ্ত আয় কাজে লাগাতে না পারে, সেজন্যই প্রাইস ক্যাপ ম্যাকানিজম গ্রহণ করেছে জি-৭। এক্ষেত্রে নানা বিতর্ক ও বিরোধ তৈরি হয়েছে। তবে সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের মূল্যসীমা বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এ জোট।