জুলাই-অক্টোবর

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে সাড়ে ৫৭ হাজার টন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য আমদানি কমেছে ৫৭ হাজার ৫৮৭ দশমিক ৮৩ টন। শুলড় বিভাগ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না। আবার বেনাপোলে কাস্টমসের হয়রানির কারণে অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।

বেনাপোল কাস্টমসের দেয়া তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছিল লাখ ৮৮ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯৩ টন পণ্য। চলতি অর্থবছরের একই সময় আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লাখ ৩১ হাজার ৭১ দশমিক ১৩ টনে। চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে হাজার ৬৬৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। ওই অর্থবছর আমদানি লাখ ৩০ হাজার টন কমে যায়। ২০১৯-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ১১ হাজার টন।

অন্যদিকে গেল বছর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা হয়েছে হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয় হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো একই কারণে এলসি খুলছে না, যা আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যশোরের আমদানিকারক রেজেয়ান আহমদ বলেন, বর্তমানে যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। তাই আমদানি করতে পারছি না। পণ্য আনতে না পারার কারণে লোকসান হচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, আমদানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ব্যাংকগুলো এলসি না খোলা।

আমদানিকারকরা জানান, কাস্টমের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গিয়েছে। কাস্টমসকে টাকা দিতে হয় বাধ্যতামূলক। তা নাহলে বিভিন্ন অজুহাতে আমদানিকারকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার শুক্রবার শনিবার কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় চলে যান।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেয়ার নিয়ম করেছে। চলতি মাস থেকে বেশির ভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া জানান, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে গত চার মাসে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে এখানে কোনো হয়রানি হয় না বলে দাবি করেন কর্মকর্তা।

সোনালী ব্যাংক যশোর করপোরেট শাখার ডিজিএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ব্যবসায়ীরা নগদ টাকার জোগান দিতে না পারার কারণে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন