বড় স্ক্রিনে খেলা দেখার প্রবণতায় টেলিভিশন কেনা বাড়ে

বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশের বাজারে টেলিভিশন বিক্রির চিত্রটা কেমন?

বিশ্বকাপ আসে চার বছর পরপর। ফুটবলের উন্মাদনায় মানুষ চায় বড় পর্দায় খেলা দেখতে। সেদিক থেকে বিশ্বকাপে টেলিভিশন বিক্রির পরিমাণ বাড়ে। তবে এবারের বিশ্বকাপ এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন গোটা বিশ্বে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। সেটির প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশেও। তার পরও আমাদের টেলিভিশন বিক্রি ভালোই হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি আরো বাড়বে। আসলে বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিক্রি একটু বেশি থাকে তবে পুরো বিশ্বকাপের সময়ই ফুটবলপ্রেমীরা টেলিভিশন কেনে। বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টার বেশি। এছাড়া অন্য যে দলগুলো রয়েছে তারা যখন ম্যাচ জিতে টুর্নামেটে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন সেই দলের ভক্তদের মাঝে বড় স্ক্রিনে সবার সঙ্গে খেলা দেখার আগ্রহ থেকে টেলিভিশন কেনার প্রবণতা বাড়ে। আমাদের বিক্রিও বেড়ে যায়।

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোক্তা চাহিদা মেটাতে দেশীয় টেলিভিশন কোম্পানিগুলো কী কী করছে?

আমরা কনকার সব মডেলেই নতুন নতুন ফিচার নিয়ে আসছি, স্মার্ট টিভি, অ্যান্ড্রয়েড টিভির চাহিদা মেটাচ্ছি। যাতে গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ে। মোবাইল-কম্পিউটারের যুগে টেলিভিশন কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে কনকা টিভি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ইলেভেন ভার্সন সংযোজন করেছে। এছাড়া ভয়েস কন্ট্রোল প্রযুক্তি, গুগল সার্টিফায়েড ভয়েস সিস্টেম এবং রেডিয়েশনের কারণে যাতে মানুষের চোখের কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিক বিবেচনায় ফিচার আপডেট করেছে কনকা। আমরা জিরো এক্স রেডিয়েশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। নতুন একটি প্রযুক্তি আমরাই প্রথম বাজারে আনছি অল্প সময়ের মধ্যে। সেটি হচ্ছে টেলিভিশন কোনো এক জায়গায় সেট করার পর আপনি রুমের যেখানেই থাকেন না কেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি আপনার দিকে রোটেড হবে। এছাড়া এখন মোবাইল ফোন কম্পিউটারের যুগে টিভির আবেদন যাতে হারিয়ে না যায়, সেদিক বিবেচনায় নানা প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে, যেমন ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইল ফোন মেমোরি কার্ড সংযুক্ত করার মাধ্যমে টেলিভিশনের বড় স্ক্রিনে সব ধরনের অনুষ্ঠান খুব সহজেই দর্শক উপভোগ করতে পারছে। এতে ইউটিউব, ওটিটি প্লাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল বা কম্পিউটার-ল্যাপটপের তুলনায় টিভি স্ক্রিন অনেক বড়। অনেকে একসঙ্গে অনুষ্ঠান বা খেলা দেখতে চাইলে টিভির বিকল্প নেই। গেমস খেলতে পছন্দ করে অনেকে। এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে সেই ব্যবস্থাও থাকছে। তাই টিভির আবেদন হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমার মনে হয়, টিভির চাহিদা নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে দিন দিন বাড়বে।

বাংলাদেশে টেলিভিশনের বাজারটা কেমন?

বাংলাদেশে বছরে টেলিভিশনের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ। বিশাল মার্কেটের অন্তত ৬০ ভাগ দখল করে আছে দেশে উৎপাদন করা কোম্পানিগুলো। কনকাও দৌড়ে অনেক এগিয়ে আছে। আমরা কনকার সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে এখানে টেলিভিশন উৎপাদন করি। বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশে আমাদের ব্র্যান্ডের টেলিভিশন বিক্রি হয়। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় একটা কারখানা করেছি আমরা। সেখানে কনকা এলইডি উৎপাদন হয়। শিগগিরই আমরা এখানে উৎপাদিত টেলিভিশন প্রতিবেশী দেশগুলোতে রফতানি করতে পারব। ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশ আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া আফ্রিকায়ও রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সরকার যদি কাঁচামাল আমদানিতে সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে বাংলাদেশেও টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

বিদেশী ব্র্যান্ডের ভিড়ে দেশী কোম্পানিগুলো কতটুকু এগিয়েছে?

বাজারে আমদানি হওয়া ফ্রেশ টেলিভিশনের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতা আছে দেশী ব্র্যান্ডের। আমরা যারা দেশে উৎপাদন করছি, তাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আমদানি করা টেলিভিশনের চেয়ে কিছুটা কম। কারণ সরকার আমাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। তার পরও প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য কম লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। আবার বিদেশী কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্য কিছুটা বাড়তি সুবিধা পায়। কনকা বিদেশী ব্র্যান্ড হলেও আমরা এখানে উৎপাদন করি। তাই সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমরা দ্রুত সময়ে সরবরাহ করতে পারি। অনেক সময় বিদেশী ব্র্যান্ডের টিভির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না, তখন ভোক্তার বিড়ম্বনা বাড়ে। অন্যদিকে কনকা টিভি নষ্ট হয় খুবই কম, তার পরও কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। তাই কনকা টিভি কিনলে গ্রাহকের কোনো রকম হয়রানির শিকার হওয়ার সুযোগ নেই। কোনো গ্রাহক কোনো ধরনের সার্ভিস চাইলে আমরা দেশের যেকোনো জায়গায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্ভিস দিয়ে থাকি। গ্রাহকের জন্য আমাদের একটা হেল্পলাইন (১৬৬৪৯) নম্বরও আছে।

বর্তমানে বিশ্বমন্দার প্রভাবে কাঁচামাল আমদানিতে কোনো প্রভাব আছে কি?

টেলিভিশন উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা কাঁচামাল প্রয়োজন পড়ে। চিপসেট আমদানি করতে হয়। আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু দেশেই উৎপাদন করতে। কিন্তু এখানে আমাদের সক্ষমতার ব্যাপার আছে, আবার অনেক কিছু উৎপাদনের চেয়ে আমদানি লাভজনক। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হয়। বিশ্বব্যাপী মন্দা, আমাদের এখানে ডলার সংকট সব মিলিয়ে কিছু সমস্যা তো হচ্ছে। তবে সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা এত দিন দিয়েছে, আমরা আশা করি সামনে বর্তমান সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। যাতে টেলিভিশন শিল্প এগিয়ে যেতে পারে। কারণ গোটা বিশ্বেই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রস্তুত না থাকলে কোনো শিল্পই বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারে না।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে আপনারা গ্রাহকের জন্য কী কী সুবিধা রাখছেন?

বাংলাদেশে প্রায় ২৪ বছর কনকা টিভির মার্কেটিং করছে ইলেক্ট্রো মার্ট। আমরা বিশ্বকাপ উপলক্ষে শোরুমে ১০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি। যারা বাংলালিংক, রবি, গ্রামীণফোনের বিশেষ ক্যাটাগরির কাস্টমার তারা শোরুমে ১২ শতাংশ ছাড় পাবেন। পাশাপাশি স্ক্র্যাচকার্ড ঘষলেই একটি টিভির সঙ্গে একটি টিভি ফ্রি, ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ ছাড়, কাতার বিশ্বকাপের লোগো সংবলিত একটি দেয়াল ঘড়ি উপহার হিসেবে থাকছে। পাশাপাশি চার বছরের প্যানেল ওয়ারেন্টি তো আছেই। এছাড়া ২৪ মাসের ইএমআই সুবিধাও রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন