মোড়কে উল্লেখিত লবণের মাত্রা ঠিক নেই ৬৫% প্রক্রিয়াজাত খাবারে

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে না নির্দিষ্ট পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন, ফসফরাসসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। একটি আদর্শ পুষ্টির সমন্বয় না থাকায় এসব খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে অনেকটাই নিরুৎসাহিত করেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রযুক্তির উত্কর্ষ অতিনগরায়ণের ফলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণের হার বেড়ে চলেছে। এসব খাদ্যপণ্যের মোড়কেও সঠিকভাবে উল্লেখ থাকে না ব্যবহূত উপাদানের মাত্রা। দেশে যেসব প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য গ্রহণের হার বেশি সেসবের মোড়কে উল্লেখিত লবণের পরিমাণ সঠিক পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাজারে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের ৬৫ শতাংশ পণ্যের মোড়কে উল্লেখিত লবণের পরিমাণ কম বা বেশি রয়েছে।

অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কনটেন্ট অ্যান্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রসেসড প্যাকেজড ফুড অব বাংলাদেশশিরোনামের গবেষণাটি গতকাল প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। দেশে প্রতিটি বিভাগের একটি মেট্রোপলিটন, গ্রাম শহর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ৯৭৪ জন তথ্য প্রদানকারীর মধ্যে -১০ বছর বয়সী ২৫০ শিশু, ২৫০ কিশোর-কিশোরীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১২০টি দোকান থেকে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে মূলত বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ছিল।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, পরীক্ষাগারে ১৪ ধরনের ১২০টি পণ্য পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১০৫টি পণ্যে লবণের তারতম্য পাওয়া যায়। এসব খাদ্যপণ্যের ৪৪ শতাংশের মধ্যে মোড়কে ঘোষিত মাত্রার চেয়ে লবণ বেশি পাওয়া যায়। মোড়কে ঘোষিত মাত্রার চেয়ে লবণ কম পাওয়া যায় ২১ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে। শতাংশ পণ্যে লবণের মাত্রার কথা মোড়কে উল্লেখই করা হয়নি। মাত্র ২৭ শতাংশ পণ্যের মোড়কে উল্লেখিত লবণের মাত্রা পাওয়া গিয়েছে।

পরীক্ষাকৃত এসব পণ্যের মধ্যে ৪৬ ধরনের বিস্কুট, ১১ ধরনের চিপস, আট ধরনের কেক, ছয় ধরনের আচার, পাঁচ ধরনের চানাচুর, পাঁচ ধরনের নুডলস, চার ধরনের ব্রেড, তিন ধরনের স্যুপ, তিন ধরনের কোমলপানীয়, ছয় ধরনের ঝালমুড়ি, ফলের রস ক্যান্ডিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গ্রাম লবণ গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে গ্রাম সোডিয়াম থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশের জনসাধারণের লবণ গ্রহণের মাত্রা গ্রামের বেশি। নির্ধারিত পরিমাণের বেশি লবণ গ্রহণের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. নাজমা শাহীন বণিক বার্তাকে বলেন, অতিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে পুষ্টিগুণ যেভাবে থাকার কথা যেভাবে থাকে না। এগুলোয় কী কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা আমরা জানি না। ব্যবহূত বহু রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নির্দিষ্ট মাত্রার উপাদান থাকে না। বেশি বা কম থাকে। এতে ক্ষতি হয়। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে এসব খাবার ভূমিকা রাখে। ফলে অকাল মৃত্যু বেশি হয়।

গবেষণার পর এখন প্রতিরোধের জায়গা থেকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কাজ করে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সমন্বয়ক ডা. আহমেদ খায়রুল আবরার। তিনি বলেন, শিশুরা প্রক্রিয়াজাত যেসব খাবার খাচ্ছে তাতে লবণের পরিমাণ অত্যধিক বেশি। দিনে তিনবার যদি এমন খাবার খায় তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন। কোনো একটা চিপসে আমরা ১৮০ গুণ পর্যন্ত লবণ বেশি পেয়েছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, লবণ হচ্ছে সোডিয়াম ক্লোরাইড। এর মধ্যে ক্ষতিকর সোডিয়াম। সোডিয়াম শরীরে বেশি পরিমাণে গেলে ক্ষতির কারণ হয়। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনের সময় কোনো কিছুর সঙ্গে লবণ মিশিয়ে দেয়া হলেও সোডিয়ামের কোনো পরিবর্তন হয় না। সোডিয়াম শরীরে বেশি প্রবেশ করলে পানি বেশি শোষণ করে। কিডনি থেকে পানি শোষণ বেশি হয়। শরীরের ওজন বেড়ে যায়। উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। ছোটবেলা থেকে লবণ বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে কম বয়সেই উচ্চরক্তচাপ হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন