পাঠক মত

বস্ত্র শিল্পে পানিদূষণ হ্রাসের টেকসই পদ্ধতি

ইয়ুথ ওয়াটার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম-২০২১ হাউজ অব ভলান্টিয়ার্স এসটেক্স-বুয়েটের সহায়তায় একটি গবেষণা উদ্যোগ। বাংলাদেশে পানি দূষণ এবং পানিসংক্রান্ত নানা সমস্যার প্রেক্ষাপটে এর থেকে উত্তরণে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পানি নিয়ে গবেষণার কাজে উৎসাহিত করতে গবেষণা প্রোগ্রামটি চালু করা হয়েছে। প্রোগ্রামের অধীনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। সেগুলো থেকে নির্বাচিত দুটি নিবন্ধের অংশবিশেষ নিয়েই আজকের পাঠক মত সাজানো হলো

দেশের অর্থনীতি রফতানি আয়ের জন্য বস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প।  শিল্পের কারখানায় প্রচুর পানি ব্যবহূত হয়। স্পিনিং, নিটিং এবং উইভিং ইউনিটসহ আমাদের বস্ত্র শিল্পে বিভিন্ন পরিসরে প্রতি বছর প্রায় ২১৭ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ব্যবহূত হচ্ছে। যার একটি বড় অংশ দূষিত পানি হিসেবে জলাশয়ে পড়ছে। দূষিত পানির ব্যবস্থাপনা পরিশোধনে শিল্প-কারখানাগুলো আগের তুলনায় বেশ সচেতন হলেও পরিশোধন প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত বর্জ্য বা স্লাজ ব্যবস্থাপনায় খুব একটা সচেতনতা এখনো তৈরি হয়নি। প্রতি বছর শিল্পে প্রায় ৫০ হাজার টন স্লাজ তৈরি করছে।  বিপুল টেক্সটাইল স্লাজ মোকাবেলার জন্য টেকসই পুনর্ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ইয়ুথ ওয়াটার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম-২০২১-এর অধীনে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে সম্প্রতি।

তাতে  দেখা যায়, পরিত্যক্ত টেক্সটাইল ইটিপি স্লাজের বড় অংশই বাণিজ্যিক ব্যবহার ছাড়াই ফেলে দেয়া হয়। বিষাক্ত বর্জ্যে উচ্চমাত্রায় ভারী ধাতু জৈব-অজৈব পদার্থ থাকে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যখন বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির পানি বর্জ্যগুলোর সঙ্গে মিশে এবং বর্জ্যে বিদ্যমান ভারী ধাতু দূষক পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়। এতে পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠে এবং তা মাটি, আশপাশের জলাশয়, এমনকি ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করতে পারে। মাটি এবং জলজ পরিবেশের দূষণ মানব স্বাস্থ্য, গবাদিপশু, বন্যপ্রাণী, মাছ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিপজ্জনক বর্জ্যে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য থাকতে পারে। ফলে বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। শিল্পের বিকাশ শহর এলাকা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র শিল্পের বর্জ্য পানি থেকে স্লাজের পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্লাজের জৈব-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো (পিএইচ, আর্দ্রতা, বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, ক্যালোরিফিক মান এবং ভারী ধাতু) শনাক্ত এবং তাদের নিরাপদ নিষ্পত্তির জন্য পরিবশবান্ধব অর্থ সাশ্রয়ী উপায় গ্রহণ ভীষণ প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বর্জ্য শোধনের মাধ্যমে উৎপাদিত স্লাজ প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনর্ব্যবহারে যথাযথ অবকাঠামোর যথেষ্ট অভাব এক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

ইয়ুথ ওয়াটার ফেলোশিপ প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত গবেষণায় সিমেন্ট কংক্রিট ফ্লোরিং টাইলস, ব্লক, ক্লে-ব্রিক এবং পেভমেন্ট ব্লকের মতো অবকাঠামোগত উপকরণ তৈরিতে টেক্সটাইল এফ্লুয়েন্ট স্লাজ ব্যবহারকে একটি টেকসই বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। টেক্সটাইল বর্জ্য শোধনাগার থেকে উত্পন্ন স্লাজ ক্লে-ব্রিক, কংক্রিট ব্লক এবং সিমেন্ট জাতীয় সামগ্রীসহ অবকাঠামোগত উপকরণ তৈরিতে পুনরায় ব্যবহার করা সরাসরি বর্জ্য নিষ্পত্তির ফলে উদ্ভূত ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সর্বোত্তম উপায় হতে পারে। কারণ এতে বর্জ্য সরাসরি বৃষ্টির পানির সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলে ভারী ধাতুসহ অন্যান্য দূষক পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে না।

নির্মাণসামগ্রী হিসেবে স্লাজের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহারিক, বাণিজ্যিক এবং পরিবেশবান্ধব উপায়গুলোকে আরো অনেক প্রচার করা দরকার। কংক্রিট তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত স্লাজ সূক্ষ্ম বালির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া ইট সিরামিক টাইলস তৈরিতে কাদামাটির প্রতিস্থাপক হিসেবে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের স্লাজ সর্বোচ্চ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। ২০-৩০ শতাংশ স্লাজ প্রতিস্থাপন দ্বারা তৈরি নমুনাগুলো লোড বহনকারী ইউনিটের জন্য সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। স্লাজ পুনর্ব্যবহারের ওই উপায়গুলো বাস্তবায়িত করা গেলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো স্লাজ বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান এবং ইটিপি ব্যবহারেও অধিক আগ্রহী হবে। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য টেক্সটাইল স্লাজের টেকসই পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিবেশগত প্রভাব এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সম্পর্কে আরো বিশ্লেষণ করা জরুরি। 

 

সাদিয়া আফরোজ এষা: ফেলো ইয়ুথ ওয়াটার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম-২০২১ শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন