একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে টেলিফোনে গালাগালের ঘটনায় টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই কর্মকর্তাকে ‘ওএসডি’ করার পাশাপাশি আদালত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে বললে সেটাও প্রতিপালন করা হবে।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। দেশে যে প্রায় ৫০০ উপজেলা আছে এবং প্রত্যেক উপজেলায় যে একজন করে ইউএনও আছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৫০০ জন লোকের মধ্যে সবাই ভালো হবে এটা কীভাবে আপনারা আশা করেন। আমাদের এরই মধ্যে নির্দেশনা রয়েছে, তাকে ওএসডি করে নিয়ে এসে তার বিরুদ্ধে আদালত কী নির্দেশনা দেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নাফ নদীসংলগ্ন ওয়াব্রাং এলাকায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কিছু ঘর নির্মাণ করে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি ঘরে জোয়ার-ভাটা ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন উপকারভোগীরা।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্ট নামের একটি ওয়েব পোর্টালে ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন ওই পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম ফরহাদ। এর জেরে সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় টেকনাফের ইউএনও তার সরকারি ফোন নম্বর থেকে সাইদুলকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে ওই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে শুক্রবার সমাধানের জন্য দুই পক্ষকে ডাকা হয়। সেখানে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান ইউএনও। এরপর পুরো বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন একজন আইনজীবী।
এরপর ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে কী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে রোববার আদেশ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ইউএনওর গালাগালির প্রসঙ্গ ধরে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার শুনানিতে বলেন, কোনো রং হেডেড পারসন ছাড়া এমনভাবে বলতে পারে না। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা বলেছি তাকে জরুরি ভিত্তিতে ওএসডি করে নিয়ে আসো। তারপর হাইকোর্ট থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খুব জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেসব জেলায় যাবেন, সেখানকার সব কর্মকর্তার সঙ্গে বসে তাদের আচার-ব্যবহার কেমন হবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
