যশোরে খোলাবাজারে ডলার ১১০ টাকা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

হঠাৎ করে দেশের বাজারে বেড়ে গেছে ডলারের বিনিময় হার। এতে অস্থির হয়ে উঠেছে মুদ্রাবাজার। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে যশোরের ব্যাংকগুলোতে। বেশির ভাগ ব্যাংকেই ডলার মিলছে না। অনেক ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু ব্যাংকে ডলার মিললেও গ্রাহককে তা কিনতে হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায়। তবে খোলাবাজারে বিনিময় হার আরো বেশি। বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এতে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় ৬১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৯৫ টন পণ্য। রেকর্ড আমদানি ব্যয় চাপে ফেলেছে দেশের অর্থনীতিকে। এতে দেশে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে যারা আমদানি করেন, তারা বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। ১০ হাজার ডলারে যারা এলসি করবেন, তাদের দিতে হচ্ছে ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা করে এবং ২৫ হাজার বা তার বেশি ডলারের এলসি করলে ৯৫ টাকা থেকে ৯৭ টাকা প্রতি ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর যারা বেনাপোল দিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন, তারা খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছেন ১০৭-১১০ টাকায়।

যশোরের মোটরসাইকেল পার্টস আমদানিকারক রিপন অটোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ডলারের অস্বাভাবিক বিনিময় হারের কারণে আমরা এলসি করতে পারছি না। একটি পণ্য চালান এলসি করতে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৯৫-৯৭ টাকা করে। আবার এলসি করার পর টাকা পরিশোধে ৮০ দিন সময় পাওয়া যায়। দেখা যায় টাকা পরিশোধের সময় ডলারের বিনিময় হার আরো বেড়েছে। তখন সেই দামে টাকা দিতে গিয়ে ফের লোকসানের শিকার হতে হবে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফারিয়া মোটরসের স্বত্বাধিকারী রেজোয়ান আহমদ মুরাদ জানান, এলসি করার জন্য ব্যাংকে গেলেও ডলার মিলছে না। আবার ডলার মিললেও এজন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। শহরের বেজপাড়ার রবিউল আলম বলেন, আমার পরিবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবে। এজন্য গতকাল আমি অন্তত ১০টি ব্যাংকে গিয়েছি ডলারের জন্য। কিন্তু কোথাও পাইনি। পরে খোলাবাজার থেকে কিনেছি ১১০ টাকা করে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস প্রসিডেন্ট খুলনা রিজিওনাল প্রধান ফকির আক্তারুল আলম জানান, ডলারের বিনিময় হার প্রতিদিন বাড়ছে। খোলাবাজারে তা আরো বেশি রাখা হচ্ছে। কারণে এলসির হার কমে গেছে। এতে আমদানিকারকদের পাশাপাশি ব্যাংকও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে ডলারের বিনিময় আরো বাড়বে।

ইসলামী ব্যাংকের যশোর জোনপ্রধান শফিউল আযম বলেন, সব জায়গায় ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে খাদ্যপণ্য বাদে অন্য আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের যশোর শাখার ব্যবস্থাপক সৈয়দ আনিছুজ্জামান বলেন, ১০ হাজারের বেশি ডলারের এলসিতে ব্যাংকগুলো ৯৫ টাকা করে নিচ্ছে। ডলার সংকট থাকায় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে ডলার সংকট বেশি হচ্ছে। যে কারণে অনেকে এলসি করা কমিয়ে দিয়েছেন। এখন যারা এলসি করবেন তাদের বেশি দামে ডলার কিনতে হবে।

ঢাকা ব্যাংকের যশোর শাখা ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবির জানান, সব ব্যাংকই এখন ডলার সংকটে রয়েছে। আগে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি সঙ্গে করে দেশে ডলার আনতেন। কিন্তু সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার খোলাবাজারে ডলার মিললেও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল আমার এক বন্ধু খোলাবাজার থেকে ১০৭ টাকা করে ডলার কিনেছেন। আবার অনেকে উপায় না পেয়ে ১১০ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার ডলারের রিজার্ভ যাতে না কমে, সেজন্য বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে। তবে অন্যান্য পণ্য যারা আমদানি করবেন, তাদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। একটি পণ্য চালান দেশে আসতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লেগে যায়, তখন দেখা যায় ডলারের রেট আরো বেড়েছে। এতে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এভাবে ডলার সংকট চলতে থাকলে আগামীতে ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে আমদানিকারকদের পথে বসার উপক্রম হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন