মেট্রোরেল পরিচালনা

শুরুতেই ১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চায় ডিএমটিসিএল

শামীম রাহমান

দেশের প্রথম মেট্রোর অর্ধেক অংশ আগামী ডিসেম্বরে চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে উত্তরা-আগারগাঁওয়ের অংশে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে মেট্রো ট্রেন। বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর আগেই হাজার কোটি টাকা সরকারের কাছে ভর্তুকি চেয়েছে ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সম্প্রতি টাকা চেয়ে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। ভর্তুকি বা অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা হাজার কোটি টাকা উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করবে ডিএমটিসিএল।

তবে ভর্তুকি বা অনুদান হিসেবে অর্থ চাইলেও তা ব্যয়ে এখনো কোনো বিজনেস মডেল উপস্থাপন করতে পারেনি ডিএমটিসিএল। ফলে টাকা ভর্তুকি নাকি ইকুইটি হিসেবে দেয়া হবে, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ। জটিলতা নিরসনে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য আগামীকালের মধ্যে ডিএমটিসিএলের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে।

উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের প্রায় ২০ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ, স্টেশন, সিগন্যাল, রোলিংস্টক, ডিপো, ওয়ার্কশপসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন-) প্রকল্পের মাধ্যমে। মেট্রোটি গড়ে তুলতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি নির্মাণ ব্যয় আরো প্রায় ৫২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদন হলে দেশের প্রথম মেট্রোটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে। প্রকল্প ব্যয়ের একটা বড় অংশ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)

বিপুল বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা ঢাকার প্রথম মেট্রোটি পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণেও মোটা অংকের টাকা খরচ হবে। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর আগেই পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য এককালীন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বা অনুদান হিসেবে চেয়েছে ডিএমটিসিএল।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয়, এমআরটি লাইন--এর বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর নিমিত্তে পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য অনুদান বা ভর্তুকি হিসেবে হাজার কোটি টাকা এককালীন ডিএমটিসিএলের অনুকূলে প্রদানের জন্য ডিএমটিসিএল থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ডিএমটিসিএল সম্পর্কিত অনুষ্ঠিত একটি সভায়ও উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য ভর্তুকির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তুকি বা অনুদান হিসেবে চাওয়া হাজার কোটি টাকার খরচ সুনির্দিষ্ট দেখানো প্রয়োজন। এমআরটি লাইন- পরিচালনার জন্য ফিক্সড কস্ট কত হবে, অপারেশনাল কস্ট কত হবে এবং টিকিট থেকে আনুমানিক আয় কত হবে তার সম্ভাব্য হিসাব জানা প্রয়োজন। পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষণ খাতে সম্ভাব্য ব্যয় আগাম জানা থাকলে চাহিত টাকার যৌক্তিকতা নির্ধারণ করা সহজ। এছাড়া ডিএমটিসিএলকে প্রদত্ত অর্থ অনুদান বা ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হবে না ইকুইটি হিসেবে দেয়া হবে, তাও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এজন্য ভর্তুকি চেয়ে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে হাজার কোটি টাকা খরচের যৌক্তিকতাসহ বিজনেস প্ল্যান দেয়ার জন্য ডিএমটিসিএলকে অনুরোধ করে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ। যদিও এখন পর্যন্ত সম্পর্কিত কোনো তথ্য মহাসড়ক বিভাগে দিতে পারেননি ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা।

বিষয়ে জানতে গতকাল ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিকের সেলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে গত ২৬ জানুয়ারি মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত মেট্রোরেলের পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বিষয়ক এক সভায় তিনি জানান, এমআরটি লাইন--এর বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করতে পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য অনুদান বা ভর্তুকি হিসেবে হাজার কোটি টাকার বিষয়ে এক মাসের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে খাতভিত্তিক বিস্তারিত তথ্যাদি পাওয়া যাবে। এরপর তা সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হবে। ওই সভায় ডিএমটিসিএল আগামীকালের মধ্যে পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত তথ্যাদি পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১৩ সালের জুনে গঠন করা হয় সম্পূর্ণ রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি ডিএমটিসিএল। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। তবে এখনো শেয়ার বরাদ্দের জন্য সম্মতি পায়নি কোম্পানিটি। কারণে ডিএমটিসিএল গঠন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ শূন্য।

পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ শূন্য হলেও এখন পর্যন্ত সরকার তিন দফায় ইকুইটি হিসেবে ডিএমটিসিএলকে ২৫ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ। আরো ১০ কোটি টাকা দেয়া হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। সর্বশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বর আরো ১০ কোটি টাকা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে টাকা পরিশোধিত মূলধনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন