বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের অনুষ্ঠানের তথ্য

বছরে প্রতি হেক্টর জমির ১২০ কেজি পটাশিয়াম নষ্ট হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জমির উর্বরা শক্তিকে ধরে রাখতে জিংক বা দস্তার পাশাপাশি নাইট্রোজেন, জৈব উপাদান, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, বোরন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকতে হবে প্রয়োজনীয় মাত্রায়। কিন্তু দেশের সিংহভাগ জমিতে নেই জৈব এসব উপাদান। আবাদে অব্যবস্থাপনা ও কৃষকের অসচেতনতায় বছরে প্রতি হেক্টর জমি থেকে নষ্ট হচ্ছে ১২০ কেজি পটাশিয়াম। ফলে দেশের আবাদি জমির বড় একটি অংশ এখন পটাশিয়ামের ঘাটতিতে রয়েছে।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সেমিনার, শোকেসিং, সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন, ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।

দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপকূলের লবণাক্ত, হাওর, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ প্রতিকূল পরিবেশে ও জমিতে ফসল উৎপাদনে সরকার এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের আমলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে। সরকার এখন সব মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে। কিন্তু ক্রমহ্রাসমান চাষযোগ্য জমি, বিপরীতে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠী ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই বা ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, দেশে লবণাক্ততা একটি বড় সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায়, খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও টেকসই রাখতে হলে উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে চাষযোগ্য জাত এবং উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ছড়িয়ে দিতে হবে। সেজন্য আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক ফসলের লবণাক্ততাসহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবনে করতে সক্ষম হয়েছে। এসব জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি চাষীদের মধ্যে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য কাজ চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী বলেন, লবণাক্ততাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের নানা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এর ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে মানুষের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। দেশের লবণাক্ত এলাকায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিজ্ঞানভিত্তিক টেকসই কৃষি অনুশীলন এবং প্রযুক্তিগত ইনোভেশন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে মাটির অবক্ষয় রোধে বিনিয়োগ ও গবেষণা বাড়াতে হবে।

এসআরডিআইয়ের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন। অনুষ্ঠানে এসআরডিআই প্রকাশিত ‘সয়েল অ্যাটলাস অব বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এবারের বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘লবণাক্ততা রোধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি’।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা হচ্ছে উপকূলীয়। উপকূলীয় ১৮টি জেলার ৯৩টিরও বেশি উপজেলার ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। লবণাক্ততার কারণে এ এলাকার ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন