পুঁজিবাজারের লেনদেনের ৪৪ শতাংশই ব্যাংক খাতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে দশমিক ৮৯ শতাংশ। সূচকের পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ৩১ শতাংশ। ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৪ শতাংশই ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ারের দখলে। গতকাল দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক লেনদেন কমেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে কয়েকদিন ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলত ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কারণে বেশকিছু বিনিয়োগকারী ভালো লভ্যাংশের প্রত্যাশায় ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। এতে গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতের শেয়ারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। এদিকে আরেক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ার কারণে মুনাফা তুলে নিতে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে গতকাল তালিকভুক্ত প্রায় সব ব্যাংকের শেয়ারদরই কমেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। তবে লেনদেন শুরুর ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সার্বিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। কিন্তু এর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ার কারণে দ্রুত পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। শেষ পর্যন্ত দিনশেষে  ডিএসইএক্স গতকাল ৬৩ পয়েন্ট কমে হাজার ২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল হাজার ৮৬ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), আইএফআইসি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, সিটি ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে পয়েন্ট কমে হাজার ৪৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ৪৭৫ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৭ পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৬৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৬৮৪ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে হাজার ২২৬ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১০৪টির, কমেছে ২১৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। এদিন ব্যাংক খাতের ৫৩৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে বস্ত্র খাত। দশমিক ৬০ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা আর্থিক খাতের দখলে ছিল লেনদেনের দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ বীমা খাতের দখলে ছিল শতাংশ। গতকাল শেয়ার বিক্রির চাপের কারণে ব্যাংক খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি প্রায় শতাংশ ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে। ইতিবাচক রিটার্নের দিক দিয়ে শীর্ষে ভ্রমণ অবকাশ খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল ওয়ান ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ফরচুন সুজ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

সমাপনী দরের ভিত্তিতে গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ ছিল সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, একমি পেস্টিসাইডস, কাট্টলী টেক্সটাইল, আমান ফিড, ওয়ান ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফু-ওয়াং ফুড, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং রহিম টেক্সটাইল।

অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে কোহিনূর কেমিক্যালস, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, আরামিট সিমেন্ট, আমরা টেকনোলজি, স্টাইলক্রাফট, এনআরবিসি ব্যাংক, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, ইয়াকিন পলিমার, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)

দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১২ হাজার ৪৬১ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ১৯১টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ৮১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৭১ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন