পরিবেশ রক্ষায় নতুন পদক্ষেপ

দক্ষিণ কোরিয়ায় কসমেটিকসের রিফিলিং স্টেশন

দক্ষিণ সিউলের গ্যাংনাম শহরে একটি শ্যাম্পু ও বডি ওয়াশ রিফিলিং স্টেশন ছবি: দ্য কোরিয়া হেরাল্ড

সাধারণত সৌন্দর্যচর্চার সামগ্রীগুলোর প্যাকেজিং খুব চমত্কার হয়। আরেকভাবে দেখতে গেলে, গ্রাহককে আকৃষ্ট করতেই অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সাজানো হয় এসব পণ্যের মোড়ক। কিন্তু যত সুন্দরই হোক না কেন, ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু বা অন্যান্য সামগ্রী শেষ হয়ে গেলে এসব খালি মোড়কের স্থান হয় ময়লার ঝুড়িতে, যা আদতে বর্জ্যই বাড়ায় কেবল।

একটি পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১০ শতাংশ সৌন্দর্যপণ্যের মোড়ক পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়। অবশ্য এর পেছনে একটি কারণ থাকতে পারে। আর সেটি হলো এসব মোড়কে এত বেশি নকশা, রঙ স্তর থাকে যে সেগুলো সহজে পুনর্ব্যবহার করা যায় না।

ফলে বৈশ্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যায় ক্রমেই বাড়ছে সৌন্দর্যপণ্যের বর্জ্যের সমালোচনা। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন ভোক্তারাও এসব পণ্য ব্যবহারের আগে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। এমন বাস্তবতায় নতুন কসমেটিকস পণ্যের জন্য রিফিলিং স্টেশন চালু করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসব স্টেশনে নিজেদের সৌন্দর্যপণ্যের খালি পাত্র সঙ্গে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে সেগুলো পূর্ণ করে আনতে পারছেন ভোক্তারা। ফলে নতুন আরেকটি পণ্য কেনার প্রয়োজন পড়ছে না।

বিশ্বের সৌন্দর্যসচেতন নারী-পুরুষের কাছে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম হলো কোরিয়ান কসমেটিকস। কোরিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি ক্রিম, সেরাম, অ্যাম্পুল, শ্যাম্পু, লোশনের দিকে ঝুঁকছেন বহু মানুষ। রমরমা কসমেটিকস বাণিজ্যের কোরিয়াতেও তৈরি হয়েছে রিফিলিং স্টেশন। স্থানীয় ব্র্যান্ড অ্যারোমেটিকা প্রথমবারের মতো স্টেশন চালু করেছে। তারা মূলত অর্গানিক ত্বকচর্চা শরীরচর্চার সামগ্রী তৈরি করে থাকে। গত জুনে প্রথমবারের মতো রিফিলিং স্টেশন চালু করে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে তারা।

এর পর পরই স্থানীয় বেশকিছু প্রতিষ্ঠান একই ধরনের সেবার ব্যবস্থা চালু করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গিয়ংগি প্রদেশে আগামী অক্টোবরে রিফিলিং স্টেশন চালু করতে যাচ্ছে আমোরপ্যাসিফিক। যেখান থেকে শ্যাম্পু বডি ওয়াশ রিফিল করতে পারবেন ক্রেতারা। প্লাস্টিকের বোতলের তুলনায় এর দাম কম পড়বে ৩০ সেন্ট।

একই ধরনের সেবা দিতে শুরু করেছে এলজি হাউজহোল্ড অ্যান্ড হেলথকেয়ার। দক্ষিণ সিউলের গ্যাংনামসহ বেশকিছু শহরে তাদের রিফিলিং স্টেশন চালু হয়েছে। ক্রেতারাও সেখান থেকে শ্যাম্পু বডি ওয়াশের মতো পণ্য কিনে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, অনেক গ্রাহকই প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। সবমিলিয়ে বাজারের গতি এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। সে কারণে পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য এসব রিফিলিং স্টেশন চালু করেছেন তারা। তবে রিফিলিং স্টেশনের ধারণাটি এখনো অনেক দেশের জন্য আনকোরা। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার যেমন কাজে ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়মনীতি ঠিক করে দিচ্ছে, সেটি করা গেলে নিঃসন্দেহে এসব স্টেশনের সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি কমবে প্লাস্টিক বর্জ্য। সৌন্দর্যচর্চা শিল্প খাতের ভবিষ্যতের জন্য পদক্ষেপ আসলেই কতটুকু ভালো তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক মাইউং জে উক বলেন, কোরীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য রিফিলিংয়ের জন্য যে পরিমাণ ছাড় দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। ২০-৩০ শতাংশ ছাড়ের জন্য গ্রাহকরা কেন কষ্ট করে বাড়ি থেকে খালি কৌটা বয়ে ভরে আনতে যাবেন? তিনি মনে করেন, গ্রাহক আকৃষ্ট করতে আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত।

প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিষয়ে আরো প্রচারণা চালাতে হবে। তারা যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, দূষণ কমাতে এমন চমত্কার একটি উদ্যোগ নিয়েছে সেটি সবাইকে জানাতে হবে। পাশাপাশি এসব খালি কৌটা জীবাণুমুক্তকরণ করে নতুন পণ্য ভরে দেয়ার পুরো কাজটি পরিচ্ছন্নভাবে হতে হবে। তা না হলে ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।দ্য কোরিয়া হেরাল্ড

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন