৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

গ্যাস অনুসন্ধানে দক্ষিণাঞ্চলে কার্যক্রম শুরু বাপেক্সের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাপেক্সের অনুসন্ধানে খাগড়াছড়ির সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয় ১৯৯৭ সালে ছবি: বাপেক্স

সিলেটের জকিগঞ্জে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর আরো উদ্যোগী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) বৃহৎ আকারে গ্যাস অনুসন্ধানে উত্তরের পর এবার দক্ষিণাঞ্চলে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানিটি। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে দ্বিমাত্রিক (টুডি) ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সিসমিক সার্ভে পরিচালনায় ৪০০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাপেক্স সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণের অন্তত ১০টি জেলায় হাজার ২২০ কিলোমিটার লাইন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাপেক্স। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) অর্থায়নে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাপেক্স নিজস্ব লোকবল দিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভে করার জন্য নিজস্ব লোকবলের পাশাপাশি সংস্থাটি বিদেশ থেকে দক্ষ প্রকৌশলী নিয়ে এসে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জে গ্যাস পাওয়ার পর এবং তারও আগে দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাস পাওয়ার পর বাপেক্স দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। বিশেষত নোয়াখালী, বরিশাল, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ ভোলা জেলার অন্তত চার-পাঁচটি উপজেলায় দ্বিতীয় তৃতীয় মাত্রায় জরিপ পরিচালনা করবে সংস্থাটি।

এর মধ্যে তৃতীয় মাত্রায় জরিপ পরিচালনার জন্য ২৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভোলা জেলার লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে গ্যাস অনুসন্ধান করা হবে। প্রকল্পের আওতায় হাজার ৬০০ কিলোমিটার লাইনজুড়ে জরিপ করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খনন করবে সংস্থাটি।

এছাড়া একই সময়ে ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ বরিশালের কিছু অংশে দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হবে। এজন্য বাপেক্স ১৫৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এরই মধ্যে শরীয়তপুরে অনুসন্ধান কূপ খনন করার জন্য লোকেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে সেখানে কূপ খননের কাজ শুরু হবে।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টুডি থ্রিডি সিসমিক সার্ভের কাজ শুরু করা হচ্ছে। বাপেক্সের বোর্ড সভায় -সম্পর্কিত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় হাজার ২২০ কিলোমিটার লাইন গ্যাসের অনুসন্ধান করা হবে। বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, মূলত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই সিসমিক সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। সিসমিক সার্ভে শেষ হলে ফলাফল বিশ্লেষণে বিদেশী দক্ষ পরামর্শকদের সহযোগিতা নেয়া হবে।

এর আগে শরীয়তপুর জেলায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে সেখানে দ্বিমাত্রিক জরিপ চালায় বাপেক্স। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় সংস্থাটি। এখন সেখানে কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি।

১৯৮৯ সালে গঠনের পর পর্যন্ত নয়টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে বাপেক্স। সংস্থাটির তথ্যমতে, এগুলোর মধ্যে সাতটি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে মোট ১৭টি উন্নয়ন কূপের মধ্যে সংস্থাটির মালিকানাধীন কূপ রয়েছে ১১টি। ওয়ার্কওভার কূপ রয়েছে সাতটি। গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপ করেছে হাজার ৯৬ কিলোমিটার লাইন। দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে করেছে ১২ হাজার ৭২৩ কিলোমিটার লাইন। সংস্থাটি ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে হাজার ৭০ বর্গকিলোমিটার।

পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস উত্তোলন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন বাপেক্সের আটটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বাপেক্স যে গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছে সেটি দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৪৮ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গ্যাসের আর্থিক মূল্য হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ভূভাগে বাপেক্সকে দিয়েই সফলভাবে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এখানে বিদেশী কোম্পানির প্রয়োজন নেই। তবু সরকার বিদেশী কোম্পানি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের স্থলভাগে কূপ অনুসন্ধানের জন্য বাপেক্সের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে। ভূভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানির প্রয়োজনীয়তা নেই। স্থলভাগে অন্য জায়গাগুলোতে বাপেক্স প্রতি বছর অন্তত তিনটি করে অনুসন্ধানকাজ চালাতে পারে। সে দক্ষতা তাদের আছে। কিন্তু তাদের দিয়ে নিয়মিত ভিত্তিতে সেটি করানো হয় না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন