এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থায় সরকারি পাঁচ ব্যাংকের বকেয়া ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতে পাঁচ ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৫০২ কোটি ৯ লাখ টাকা। মে মাস শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এক মাসে এ খাতে ১১ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এপ্রিল শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, মে মাসে যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকায়।
সম্প্রতি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিস্থিতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, বকেয়া ঋণের কিছু হয়তো মেয়াদোত্তীর্ণ আছে। একপর্যায়ে ঋণের অধিকাংশ খেলাপিতে পরিণত হবে। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লোকসানের মধ্যে পড়বে, এমনকি মূলধন ঘাটতিও বাড়বে। সরকার তখন ব্যাংকগুলোকে বাজেট থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ দেবে। এছাড়া বিভিন্নভাবে সরকার এতে ট্যাকেল দেবে। এটা নতুন কিছু নয়, বহু বছর ধরেই হয়ে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের এপ্রিল শেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ওই মাসে এ খাতে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তবে মে মাসে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৬৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৭৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ সময়ে এ খাতে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আতাউর রহমান প্রধান বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার কারণে বর্তমানে ঋণ আদায় না করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। তাই ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ঋণের কিস্তি না দিলেও সেসব ঋণকে খেলাপি না দেখানোরও নির্দেশনা রয়েছে। তাই তারা নিজেরাও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। ঋণের সুদ মোট বকেয়ায় যুক্ত হয়েছে। তাই বকেয়ার পরিমাণটা বেড়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল শেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে জনতা ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৯৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা, মে মাসে যা ৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৯ লাখ টাকায়। তবে এ সময়ে এ খাতে নতুন করে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বাড়েনি।
এছাড়া এপ্রিল শেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৪৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ সময়ে খেলপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। মে মাসে ব্যাংকটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকাই রয়েছে। এ সময়ে এ খাতে নতুন করে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণও বাড়েনি। এপ্রিল শেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে রূপালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সে সময় এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মে মাসে ব্যাংকটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ সময়ে এ খাতে নতুন করে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বাড়েনি।
এপ্রিল শেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বেসিক ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ওই মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ টাকা। মে মাসে ব্যাংকটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ সময়ে এ খাতে নতুন করে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বাড়েনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩০টি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৩৯ হাজার ৩৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিপি) ৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।