স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা

মোহাম্মদ সিফাত

অনেক জল্পনা-কল্পনা দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় অতিক্রম করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেছে। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে নিঃসন্দেহে এটি একটি চমৎকার অর্জন। যদিও করোনা সংকট বিবেচনায় যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে লেগে যাবে আরো পাঁচ বছর। তবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছিল, তার পুরোটাই পাবে।

১৮ এপ্রিল তরুণদের দ্বারা পরিচালিত নীতিনির্ধারণী প্লাটফর্ম ইয়ুথ পলিসি ফোরাম আয়োজন করে ওয়াইপিএফ অন এভিডেন্স ধারাবাহিক সেমিনার সিরিজের প্রথম পর্বটির। এই উদ্বোধনী পর্বের আলোচনার বিষয়ই ছিল দীর্ঘ ৪৫ বছর স্বল্পোন্নত দেশভুক্ত থাকার পরে অবশেষে উত্তরণ বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টি করবে কতটুকু সুযোগ এবং সামনের যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কতটুকু?

সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি এর আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ওয়াইপিএফের অন্যতম উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ . ফাহমিদা খাতুন। তিনি বর্তমানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডিনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। ওয়েবিনারে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল দৈনিক বণিক বার্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মনে করেন স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব বৈশ্বিক সুবিধা পেয়ে আসছে, সেটা প্রত্যাহার করা হলেও বাংলাদেশ ওষুধ তৈরি পোশাক শিল্পের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় রাখতে সক্ষম হবে।

উন্নয়নশীল দেশের যাত্রায় ইয়ুথ পলিসি ফোরামসহ অন্যান্য তরুণ প্রচেষ্টাকে সমীহ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির একটি সুপারস্ট্রাকচার রয়েছে এবং আমাদের তরুণ প্রতিভাবানদের সংখ্যাটাও কম নয়। কিন্তু তরুণদের সাহায্য করার মতো আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। আগামী দিনগুলোয় ব্যবস্থা গড়ে উঠলে আমরা আরো বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

এলডিসি থেকে উত্তরণ একটি বিরাট প্রাপ্তি হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। তার অন্যতম একটি হতে পারে শুল্ক সুবিধার প্রত্যাহার। বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি যখনই বাংলাদেশের ওপর থেকে কোনো বাণিজ্যিক সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে তখনই আমাদের বাণিজ্যিক কর্তাব্যক্তিরা একটি উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া অথবা সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রচেষ্টার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে এসেছেন। বিষয়ে তিনি দেশের ওষুধ শিল্পের ঊর্ধ্বমুখী উন্নয়ন নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে এলডিসি পর্যায় থেকে উত্তরণের ধাপটা শিল্প ক্ষেত্রের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত কূটনীতিবিদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সঠিক সমঝোতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সদস্য হতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে আমরা যাতে যথাযথভাবে পুরস্কৃত হই। একই সঙ্গে আমাদের সব প্রকার নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক কূটনীতির আশ্রয় নিচ্ছি। যেকোনো বড় বৈশ্বিক সুবিধার সুযোগ নিতে আমরা সর্বদাই মুখিয়ে আছি।

বাংলাদেশ ২০১৮ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা শুরু করে। যাত্রায় শুরু থেকেই সরকার দেশের সব প্রাসঙ্গিক সেক্টরের মধ্যে সমন্বয় করে আসছে। ধাপ উত্তরণে যেসব পরিসংখ্যানগত হিসাব আছে, সেটা আমরা শুরু থেকেই বহাল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে কোনো অবস্থাতেই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সুযোগটি হারিয়ে না ফেলি। কিছু পরিবর্তনসাপেক্ষে আমরা খুব চমৎকারভাবেই এলডিসি পর্যায় উত্তরণ করতে পেরেছি।

স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে এসে অর্জন বাংলাদেশের জন্য বিরাট গর্বের। তবে আগামী পাঁচ বছরের সময়টি একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলডিসি মর্যাদাটি বহাল রাখতে। মাসুদ বিন মোমেন মনে করেন, যদি চলমান মহামারী মানবিক সংকট আমাদের লক্ষ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে না পারে তাহলে আমাদের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে খুব সহজেই ধাপ সম্পূর্ণভাবে উত্তরণ সম্ভব।

আগামী বছরগুলোয় পররাষ্ট্র সচিব গুরুত্বারোপ করেছেন দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে অবকাঠামো প্রজেক্টগুলো আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে।

সেমিনারটিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াইপিএফ স্বাস্থ্য কল্যাণবিষয়ক সিনিয়র ফেলো নাকিবুর রহমান। তিনি বর্তমানে ডিবিএল ফার্মায় নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন অতিথি হিসেবে আরো যোগ দিয়েছিলেন ওয়াপিএফ সিনিয়র ফেলো সামিউল হক।

অন এভিডেন্স সিরিজের প্রথম পর্বটি শুরু হয় ইয়ুথ পলিসি ফোরামের তরুণ গবেষক দলের বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ সম্পর্কিত একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ যেসব বাধার সম্মুখীন হতে পারে এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন ফোরামের দুজন তরুণ প্রতিনিধি রাইদাহ মোরশেদ অনুরাধা বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, ইয়ুথ পলিসি ফোরামের এই নতুন ধারাবাহিক অন এভিডেন্স সিরিজটিতে বিভিন্ন উন্নত দেশের কোন কোন পলিসি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত অনুকরণীয়, তা তুলে ধরা হবে একটি সঠিক গাইডলাইনের জন্য। একই সঙ্গে দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তরুণ গবেষকদের নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার একটা মাধ্যম হতে যাচ্ছে সিরিজ।

সিরিজের প্রথম আলোচনাটি দেখা যাবে ইয়ুথ পলিসি ফোরামের ফেসবুক পেজ থেকে।

মোহাম্মদ সিফাত: সহযোগী সম্পাদক

ওয়াইপিএফ বাংলা এডিটোরিয়াল টিম

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন