দাম
স্থিতিশীলতা বজায়
রাখা, মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে রাখা
কিংবা লেনদেন
ব্যবস্থার নির্বিঘ্ন
পরিচালন নিশ্চিত
করাই যেন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
চিরায়ত চৌহদ্দি।
আমরা আর্থিক
ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক
সংস্থার এই
সীমিত ভূমিকা
নিয়েই চিন্তা
করতে সাধারণত
অভ্যস্ত। তবে
২০০৮ সালের
বৈশ্বিক আর্থিক
সংকট এবং
চলমান কভিড-১৯
সংকট আমাদের
ধারণা অনেকটা
পাল্টে দিয়েছে।
এ সময়ে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে
আমরা বিভিন্ন
ধরনের বাজার
ও কর্মকাণ্ডে
সমর্থন জোগাতে
হস্তক্ষেপ করতে
দেখেছি। আর
এটি তারা
করেছে সুদহার
ও উন্মুক্ত
বাজার পরিচালনের
বাইরে তাদের
ভূমিকা সম্প্রসারণে
সহায়ক হাতিয়ারগুলো
ব্যবহারের মাধ্যমে।
এ ধরনের
হাতিয়ার ব্যবহারের
একটি উদাহরণ
দেয়া যাক।
সেটি হলো
ইউএস ফেডারেল
রিজার্ভের পে-চেক
প্রটেকশন প্রোগ্রাম
লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি।
এর মাধ্যমে
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি
ঋণদাতাদের তারল্য
জোগায়, যারা
আবার মহামারী-সংশ্লিষ্ট
দুর্দশার শিকার
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
ঋণ প্রদান
করে। স্পষ্টত,
এটি কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের (মাদার’স
সেন্ট্রাল ব্যাংক)
চিরায়ত ধরনের
বাইরের কাজ।
এখন আমরা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর
কার্যপরিধির এই
আওতা আরো
বাড়ানোর আহ্বান
শুনছি। ইউরোপীয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
সভাপতি ক্রিস্টিন
লাগার্দে এবং
ফেডের পর্ষদ
সদস্য লেইল
ব্রেইনার্ড দুজনই
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে
জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলার আহ্বান
জানিয়েছেন। ব্লাক
লাইভস ম্যাটার
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি
ম্যাক্সিন ওয়াটার্স
ফেড চেয়ার
জেরোমি পাওয়েলকে
সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণগত
বৈষম্যসহ বহুমাত্রিক
অসমতা সম্পর্কে
আরো কাজ
করার আহ্বান
জানিয়েছেন।
এ ধরনের
আহ্বান কেন্দ্রীয়
ব্যাংকিংয়ের শুদ্ধতাবাদীদের
রীতিমতো আতঙ্কিত
করে তুলছে।
তাদের দুশ্চিন্তা
হলো যে
এই বাড়তি
দায়িত্ব কেন্দ্রীয়
ব্যাংকগুলোকে আবার
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের
মূল কাজ
থেকে বিচ্যুত
করে কিনা।
তারা সাবধান
করেছেন যে
জলবায়ু পরিবর্তন
ও অসমতা
মোকাবেলায় মুদ্রানীতি
একটি ভোঁতা
অস্ত্র। এটি
দিয়ে উল্লিখিত
সমস্যা সমাধান
করা সম্ভব
নয়। তার
পরিবর্তে কার্বন
নির্গমনের ওপর
করারোপ বা
সমতামূলক গৃহায়ন
আইন শক্তিশালী
করার মাধ্যমে
বরং ওই
দুটি সমস্যা
ভালোভাবে সমাধান
করা যেতে
পারে।
সর্বোপরি সমালোচকরা
উদ্বিগ্ন যে
এই অন্য
লক্ষ্যগুলো কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের স্বাধীনতা
ব্যাহত করবে
কিনা। একটি
সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার
অথবা দায়িত্ব
পালনের উদ্দেশ্যেই
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো
নিজস্ব পরিচালনগত
স্বাধীনতা উপভোগ
করে থাকে।
কারণ ঐকমত্য
আছে যে
নির্ধারিত দায়িত্বটি
নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির
হাতে ন্যস্ত
করেছে। তবে
স্বাধীনতা মানে
এই নয়
যে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকাররা রাজনীতিবিদ
ও জনগণের
কাছে জবাবদিহির
ঊর্ধ্বে। তাদের
অবশ্যই নিজেদের
কাজের ন্যায্যতা
নিশ্চিত করতে
হবে এবং
ব্যাখ্যা করতে
হবে কীভাবে
তাদের নীতি
সিদ্ধান্ত নির্ধারিত
লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে
নেয়। কেন্দ্রীয়
ব্যাংক তার
স্বাধীনভাবে প্রতিপাদনযোগ্য
টার্গেট অর্জন
করতে পারে
কি না,
তার ভিত্তিতে
ওইসব নীতির
সফলতা বা
ব্যর্থতা মূল্যায়ন
করা যেতে
পারে।
বলা হচ্ছে,
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ব্যাপকভাবে বিস্তৃত
দায়িত্বের ফলে
নীতি হাতিয়ার
ও টার্গেটগুলোর
মধ্যকার সম্পর্ক
অধিক জটিল
হবে। বিশেষ
করে এর
মাধ্যমে নীতি
সিদ্ধান্তগুলোর ন্যায্যতা
অন্যকে বোঝানো
কঠিন হবে।
আরো কঠিন
হবে সেগুলোর
সাফল্য কিংবা
ব্যর্থতা মূল্যায়ন
করা। প্রকৃতপক্ষে
জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলা বা
অসাম্য হ্রাসে
মুদ্রানীতির খুব
সীমিত প্রভাব
থাকার কারণে
এ ধরনের
চলক নির্ধারণে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ব্যর্থ হবে।
উপরন্তু, এ
ব্যর্থতা ঘিরে
সৃষ্ট হতাশা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
পরিচালনগত স্বাধীনতায়
হস্তক্ষেপ করার
দিকে রাজনীতিবিদদের
চালিত করতে
পারে।
উপরোক্ত যুক্তিগুলো
একেবারে ভিত্তিহীন
নয়। এগুলোর
যথেষ্ট যৌক্তিকতা
আছে বৈকি।
একই সঙ্গে
এটিও সত্য
যে সব
ধরনের জরুরি
মুহূর্তে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকাররা নিজেদের
দায়িত্ব এড়াতে
পারেন না।
চুপ করে
থাকতে পারেন
না। জলবায়ু
পরিবর্তন ও
অসমতা মোকাবেলায়
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর
আহ্বান এই
সচেতনতার প্রতিফলন
ঘটায় যে
এসব সমস্যা
আমাদের অস্তিত্ব
সংকটের মাত্রা
বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয়
ব্যাংকাররা যদি
সেগুলো উপেক্ষা
করেন বা
বলেন—‘এসব
জরুরি সমস্যা
অন্য কারো
দ্বারা সবচেয়ে
ভালোভাবে সমাধান
হবে’, তাহলে
তাদের প্রতিক্রিয়াকে
উদাসীনতার ত্বরিত
ও ক্ষতিকর
প্রকাশ হিসেবে
দেখা হবে।
তেমনটি হলে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
স্বাধীনতা সত্যিই
ঝুঁকিতে পড়বে
বৈকি।
তাহলে কী
করতে হবে?
নিয়ন্ত্রক হিসেবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
এমন কিছু
হাতিয়ার আছে,
যা দিয়ে
জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলায় তারা
কাজ করতে
পারে। তার
জন্য তাদের
আরো বিস্তৃত
জলবায়ুসংশ্লিষ্ট আর্থিক
ডিসক্লোজারের প্রয়োজন
হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
ওপর কঠোর
মূলধন ও
তারল্য শর্ত
আরোপ করতে
পারে, যাদের
সম্পদ পোর্টফোলিও
জলবায়ু ঝুঁকিতে
উন্মোচিত, নাজুক।
এ ধরনের
হাতিয়ারগুলো আর্থিক
ব্যবস্থাকে বিদ্যমান
বিনিয়োগগুলোর দায়
গ্রহণে নিরুৎসাহিত
করবে।
আর্থিক স্থিতিশীলতায়
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত
ঝুঁকি বোঝার
চ্যালেঞ্জ হলো
জলবায়ুসংক্রান্ত ঘটনাগুলো
অনিয়মিত এবং
অসরল। সেগুলো
যখন মডেলিং
করবে, তখন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর
ভুল এড়ানো
খুব গুরুত্বপূর্ণ
হবে, যেমনটা
তারা কভিড-১৯-এর
মডেলিংয়ের ক্ষেত্রে
করেছিল। ওই
সমস্যা উদ্ভূত
হয়েছিল কারণ
অর্থনীতিবিদ ও
রোগতত্ত্ববিদরা নিজস্ব
চৌহদ্দিতে আলাদা
আলাদাভাবে কাজ
করেছিলেন। কাজেই
লাগার্দে ও
ব্রেইনার্ডের মতো
প্রবক্তাদের যে
কেউ জিজ্ঞাসা
করতে পারেন—কতজন
জলবায়ু বিজ্ঞানী
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো
নিয়োগ দিয়েছে?
তারা কখন
কাজ শুরু
করবেন?
সমরূপভাবে, যখন
অসমতার প্রশ্ন
আসে তখন
দেখা যায়
কিছু কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের এরই
মধ্যে প্রাসঙ্গিক
দায়িত্ব আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৭
সালের কমিউনিটি
রিইনভেস্টমেন্ট অ্যাক্ট
ফেডসহ অন্য
নিয়ন্ত্রকদের নিম্ন
ও সীমিত
আয়ের পরিবারগুলো
যাতে পর্যাপ্ত
ঋণ পায়,
তা নিশ্চিতের
দায়িত্ব ন্যস্ত
করে। ফেড
এ দায়িত্ব
তার ১২টি
আঞ্চলিক রিজার্ভ
ব্যাংককে দিয়েছে,
যার প্রতিটিই
এ দায়িত্ব
বিভিন্নভাবে পরিপালন
করে। কিছুদিন
আগে ফেডারেল
রিজার্ভ পর্ষদ
থেকে বর্ণগত
বৈষম্য রোধে
প্রত্যক্ষ মনোযোগ
দেয়ার নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে।
সবার জন্য
ঋণের সমান
প্রাপ্যতা নিশ্চিতের
মাধ্যমে সময়োপযোগী
নির্দেশনাটি আসলে
বিদ্যমান প্রচেষ্টাকে
আরো বেগবান
করবে।
প্রান্তিক ও
সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর
ঋণ প্রাপ্যতার
বিষয়টি গুরুত্ব
দেয়া নিশ্চয়ই
ইসিবির মতো
অন্য কেন্দ্রীয়
ব্যাংকগুলোর জন্য
হবে একটি
বড় ডিপার্চার।
কিন্তু তার
জন্য ইউরোপীয়
পার্লামেন্ট বিশেষ
নির্দেশনা দিতে
পারে। তদুপরি
ওই আহ্বান
বাস্তবায়নে ইসিবি
বোর্ড জাতীয়
প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে
কাজ করতে
পারে, যাতে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো
ইউরোপীয় ব্যবস্থার
সঙ্গে সংগতি
রাখতে সমর্থ
হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন,
অসমতাসহ মূল্যস্ফীতি
ও পেমেন্টের
বাইরে কিছু
বিষয়ের ওপরও
মুদ্রানীতির প্রভাব
আছে। কেন্দ্রীয়
ব্যাংকারদের জন্য
ওইসব সংযোগ
অস্বীকার করা
কিংবা সেসব
সমস্যা সমাধানের
দায়িত্ব অন্য
কারো বলাটা
বিপজ্জনক হতে
পারে। তাদের
এগিয়ে যাওয়ার
সর্বোত্তম উপায়
হলো মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিকে
ব্যবহার করা;
একই সঙ্গে
অন্য গুরুত্বপূর্ণ
উদ্বেগ সমাধানেও
তাদের নিয়ন্ত্রণমূলক
ক্ষমতা সংহত
করা।
[স্বত্ব:
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
]
ব্যারি আইকেনগ্রিন: অর্থনীতির
অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি
অব ক্যালিফোর্নিয়া,
বার্কলে; আইএমএফের
সাবেক জ্যেষ্ঠ
নীতি উপদেষ্টা
ভাষান্তর: হুমায়ুন কবির