চিঠি

চান্দুকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠির ঐতিহাসিক মূল্য

মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দার

আবুল খয়ের চান্দু বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন। তাঁর বাড়ি পারকুশীল গ্রামে। আর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি টুঙ্গিপাড়া। দুটি গ্রাম তত্কালীন গোপালগঞ্জ থানাধীন ছিল। গ্রাম দুটির মধ্যে দূরত্ব ছিল ১৩ কিলোমিটারের মতো। এখন টুঙ্গিপাড়া একটা থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ঐতিহাসিক গ্রাম দুটির মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল কুমিরগেড়ে নামে একটি খাল। খালটি ওই এলাকার সৌন্দর্যের প্রতীক বর্ণি বাঁওড়ে মিলিত হয়েছিল। এই বর্ণি বাঁওড় এখন পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে তার সৌন্দর্যে। অনেক পর্যটক সমাবেশ হয় সেখানে বর্তমানে। বর্নি বাঁওড় সম্পর্কে ইন্টারনেটে যথেষ্ট তথ্য আছে কিন্তু কুমিরগেড়ে খালের কোনো তথ্য নেই। এমনকি খাল মানচিত্রেও দেখা যাচ্ছে না। তখন আমি খালটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। তাতে সাড়া দিয়ে ঢাকার নওয়াবপুরের একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুহু, যাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ, তিনি নিশ্চিত করেছেন এই খালের অস্তিত্ব।

আবুল খয়ের চান্দুর মামা মো. একরামুল হক ছিলেন ১৯৪৭ সালের আগে অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লীগের নেতা। পরে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আর কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নেয়ামত পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি। দেশভাগের পর একরামুল হক নিজ গ্রাম বড়বাড়িয়া ফিরে আসেন এবং স্থানীয় হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বড়বাড়িয়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে যেতেন, রাজনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতেন।

তখন বঙ্গবন্ধু চিন্তাভাবনায়, আলাপ-আলোচনায় শুধুই দেশের মানুষের কল্যাণে নিমগ্ন থাকতেন। বাঙালি জাতির শোষণ থেকে মুক্তির ভাবনাগুলো উজ্জ্বলভাবে পরস্ফুিটিত হয়ে উঠত তাঁর কর্মকাণ্ডে। একরামুল হকের ভাগ্নে হিসেবে আবুল খয়ের চান্দু এসব আলোচনায় উপস্থিত থাকতেন। তিনি আলোড়িত হতেন সে সময়ে, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) মধ্যে মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর দেশপ্রেম দেখে। মামাবাড়ির সেই আলোচনাগুলো থেকেই চান্দু ভক্ত হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবের এবং তাঁকে হূদয়ে স্থান দেন। তাঁর এই ভালোবাসা আরো গভীর হয় যখন তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জের সীতানাথ মথুরানাথ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের একই শ্রেণীতে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরের সহপাঠী। এরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। তিনি ভ্রাতৃবন্ধুকে খুবই আপন করে নেন।

সেই সময়গুলোয় বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ যাতায়াতের পথে অনেকবার আবুল খয়েরের বাড়ি গিয়ে উঠেছেন। ইচ্ছে হলেই চান্দুকে সঙ্গে নিয়ে লেগে যেতেন মাছ ধরতে পারকুশীল গ্রামের পাশের বর্ণি বাঁওড়ে। কোনো কোনো সময় সে বাড়িতে তিনি রাত্রিযাপনও করেছেন।

গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া হাই স্কুল মাঠে প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সম্ভবত ১৯৪৯ সালের কোনো এক সময়। সে সময় চান্দুকে চমকে দিয়ে শেখ মুজিব মাঠে এসে হাজির হন। সামনে বঙ্গবন্ধুকে দেখে তিনি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন তাঁর দিকে। বঙ্গবন্ধু হেসে বলেন তাঁকে, তোর খেলা দেখতে চলে এলাম, তুই নাকি খুব ভালো ফুটবল খেলিস।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জ শহরে বৃহৎ জনসভা আহ্বান করেছিল। শাসকগোষ্ঠী তখন আওয়ামী লীগের উত্থানে ভীত হয়ে তাদের দমনে ১৪৪ ধারা জারি করে। শেখ মুজিব ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে মধুমতী নদীর পাড়ের বালুচরে জমা হওয়া লোকজন নিয়ে সভা শুরু করেন। সেই স্থানে এখন একটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চান্দুও ছিলেন সে সভায় একজন কর্মী হিসেবে। অসংখ্য মানুষ বালি আর জলে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনেছিল সেদিন। স্বৈরশাসক নাখোশ হয়ে তাত্ক্ষণিক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে বঙ্গবন্ধুসহ আরো কয়েকজনের নামে অজামিনযোগ্য আটকাদেশ জারি করেছিল। তত্কালে চান্দু গোপালগঞ্জ আনসার গ্রন্থাগারের পেছনে আলতাব হোসেন খানের একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন। সভাস্থল থেকে পালিয়ে চান্দু রাতে ঘরে ফিরে দেখেন তাঁর বিছানায় শুয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং সঙ্গে আছেন জালাল উদ্দিন মোল্লা। অনেক সময় তিনি কৌশলে গ্রেফতার এড়িয়েছেন। তাঁকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে সাহায্য করেছেন চান্দু। সে সময়ে তাঁর নির্দেশে রাজনৈতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে।

১৯৫৯ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, তখন আবুল খয়ের চান্দু তাঁকে চিঠি লিখেছেন বেশ কয়েকটা। তিনি চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। জেলে চিঠি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে রাজবন্দির হাতে পৌঁছত। তিনি আকারে ইঙ্গিতে বঙ্গবন্ধুকে খবরগুলো দিতেন। বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকটা চিঠিরই জেল থেকে উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব ঐতিহাসিক দলিলের শুধু একটা তিনি আগলে রাখতে পেরেছিলেন। বাকি চিঠিগুলো তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হন। মনে অনেক কষ্ট নিয়েই কাজটা তাঁকে করতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিজেআরআইতে পাটবীজ পরিদর্শক হিসেবে আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর কার্যালয়ের একজন পিয়ন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। সেই রাজাকার পিয়নের ভয়ে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর লেখা মূল্যবান চিঠিগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯- লেখা চিঠিটা কোনোভাবে বেঁচে যায়। অনেক কাগজপত্রের ভাঁজে সেই মূল্যবান চিঠিটা রক্ষা পায়। তিনি কর্মজীবনে আলমডাঙ্গা, আমলা, দৌলতপুরের আল্লার দরগা মেহেরপুরের গাংনীতে কর্তব্যরত ছিলেন। অবসরের পর তিনি গাংনীতেই থেকে যান।

পারিবারিক চাহিদার কারণে চাকরিতে যোগদানের পর তিনি আর রাজনীতিতে আগের মতো সক্রিয় থাকতে পারেননি। কিন্তু তাঁর ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান কালা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন। দেশের মধ্যেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। গোপালগঞ্জের পারকুশীলের বাড়িটা এখনো আছে। তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলেরা দেখাশোনা করেন। চান্দু মিয়ার তৃতীয় ছেলে আব্দুল কাদের কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। তিনি জানালেন, তাঁদের ইচ্ছা আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটা মেরামত করে তাঁর স্মৃতি ধরে রাখা। বাড়িতেই তাঁর মা ফিরোজা বেগম বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। তিনি ছোট মাছ আর হাতে কাটা সেমাই পিঠা (ছই পিঠা) খেজুরের গুড় দিয়ে রান্না খেতে খুব পছন্দ করতেন।

আবুল খয়ের চান্দু ছিলেন অত্যন্ত প্রচারবিমুখ একজন মানুষ। তাঁর জীবদ্দশায় তেমন কেউ জানতেই পারেননি যে তাঁর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল। যিনি তাঁর তারুণ্যের, যৌবনের দিনগুলোয় ছাত্র আন্দোলন এবং বাঙালি জাতীয় দাবি আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন সক্রিয়, একনিষ্ঠ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একান্ত সাহচর্যে এককালে সময়ের দাবি পূরণ করেছেন। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক পটভূমিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক কারণে তত্কালীন শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে অবৈধভাবে কারারুদ্ধ করেছিল। সেই সময় তিনি কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লিখে খবর আদান-প্রদান করেছেন। আর জাতির জনকও তাঁকে মনে রেখেছিলেন, তাঁর পত্রের উত্তর দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু যে চান্দুকে চিঠি দিয়েছিলেন, এটা তাঁর ছেলেমেয়েরাও জানতেন না। তাঁরা ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে একদিন ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে টিনের ট্রাংকের মধ্যে চিঠিটা পান। এর আগে চিঠি সম্পর্কে তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের কখনই কিছু বলেননি। তাঁরাই চিঠিটা উদ্ধার করেছিলেন। চিঠির খামটাও সে সময় ছিল। কিন্তু তাঁরা সে সময় এই খামের গুরুত্ব বুঝতে পারেননি যে খামটারও একসময় প্রয়োজন হবে ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে। আব্দুল কাদির জানালেন, একটা বিষয় তিনি খুঁটিয়ে দেখেছেন, বঙ্গবন্ধু যে সময় জেলে ছিলেন এবং চিঠির তারিখের সঙ্গে মিলে যায়। তবে তিনি জানেন না তাঁর বাবার কার্যালয়ের যে পিয়ন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, তাঁর নাম কী। যেহেতু আমি আলমডাঙ্গার মানুষ, নিজেও খোঁজ নিয়ে জানতে পারিনি কে সেই রাজাকার পিয়ন। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর এটা দুরূহ কাজ সেই রাজাকার পিয়নের খোঁজ পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধকালীন আলমডাঙ্গায় চাকরিরত অবস্থায় আবুল খয়েরকে একটা কার্ড বানিয়ে নিতে হয়েছিল যে তিনি একজন চাকরিজীবী এবং মুসলমান।

সেই ঐতিহাসিক চিঠিতে স্নেহের চান্দুকে বঙ্গবন্ধু যা লিখেছিলেন:

From Sheikh Mujibur Rahman

Political Prisoner

Central Jail

Dacca

17.9.59

স্নেহের চান্দু

আমার দোয়া ভালবাসা নিও। তোমার চিঠি পেয়ে খুব আনন্দিত হলাম। ভেবেছিলাম সকলেই বোধ হয় আমাকে ভুলে গেছে। তোমার চাকরীর কি হল। বাড়িতে কেন বসে আছ। আমার জন্য চিন্তা করিও না। অদৃষ্টে যাহা আছে তাহা হবেই। দেশকে ভালবাসলে কষ্ট সহ্য করতেই হয়। মৌলবী সাহেব সকলকে আমার ছালাম দিও। কোনমতে দিন কেটে যাচ্ছে। কতদিন থাকতে হয় ঠিক নেই? দুঃখের পথ যে বেছে নিয়েছে তার আবার দুঃখ কিসের। ভয় নাই খোদা সহায় আছে। অন্যায় করি নাই। আমার কথা ভুলতে চেষ্টা কর। তোমরা সবাই সুখে থাক এই আশীর্বাদ করি। খোদা হাফেজ।

তোমার ভাইজান

মুজিব।

CENTRAL  JAIL DACCA

CENSORED AND PASSED

D.I.G, I. B., E.B., Dacca

date 22/9

passed

Superintendent,

Dacca Central Jail.

চিঠিতে বঙ্গবন্ধু মৌলবী সাহেব বলতে আবুল খয়েরের বাবা মৌলবী আব্দুল মালেককে বুঝিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আবুল খয়ের চান্দুর শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সকালে। তিনি টুঙ্গিপাড়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা রুস্তম আলী বিশ্বাস একদিন আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যান। বঙ্গবন্ধু ওইদিন তাঁদের ফিরতে দেননি। রাত কাটিয়ে তাঁরা পরদিন সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট লঞ্চ থেকে নেমে তাঁরা জানতে পারেন বাঙালি জাতির মুক্তির দূতকে হত্যা করেছে কুচক্রীরা। চান্দুর ভাইজান আর নেই।

উপরের চিঠিটা আবুল খয়েরের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে নিজ হাতে হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে চিঠিটা হস্তান্তর করতে পারেননি। চিঠিটা যেদিন ফিরোজা বেগম প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করার জন্য গণভবনে যান, সেদিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। প্রটোকল অফিসার মোহাম্মদ শামীমের কাছে চিঠিটা দিয়ে আসেন। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন চান্দু মিয়ার বোনের ছেলে ডক্টর ইমাম আলি। যিনি সে সময় চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন। ঐতিহাসিক চিঠিটা গণভবনে পৌঁছেছে এটা নিশ্চিত। এখন সেটা যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে। ভবিষ্যতে হয়তো জনগণ সেটা দেখতে পাবে। আমি এই পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই, তাঁরা বিনা স্বার্থে চিঠি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হস্তান্তর করেছেন। আমার কাছে এমন একটা সম্পদ থাকলে তা আমি বেঁচে থাকতে কোনো কিছুর বিনিময়ে হস্তান্তর করতাম না। স্ক্যান করে জনগণের কাছে উন্মুক্ত করে দিতাম কিন্তু মূল কপি না। 

আবুল খয়ের চান্দু ২০০০ সালের ১৮ মে মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগমও এখন অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। তাছাড়া তাঁর দুবার স্ট্রোক করেছিল। মাঝে মাঝে নাকি একটু অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। ছেলেমেয়েরা সবাই মোটামুটি চাকরি-বাকরি করেন। কিন্তু তাদের ছোট ছেলেটা রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। আগে একটা ওষুধ কোম্পানিতে ভালো চাকরি করতেন। কিন্তু তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারকে দেখাশোনার জন্য গাংনী ফিরে আসতে হয় বিধায় সে চাকরি হারান। এখন যে কিন্ডারগার্টেনে কাজ করেন, সেখানে তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আবুল খয়ের সাহেব বঙ্গবন্ধুর জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাঁর ছেলের একটা ব্যবস্থা সরকার হয়তো করতে পারে। আর পারাই উচিত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ থাকবে বিষয়টা বিবেচনা করার। আর সরকার তাঁর বাড়িটাকে সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারে। এখন সেখানে কেউ থাকেন না। কিন্তু জাতির জনকের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি রক্ষাও আমাদের নৈতিক জাতীয় দায়িত্ব। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এদিকে নজর দেবে।

 

মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দার: বঙ্গবন্ধু গবেষক; তথ্য গবেষণা সম্পাদক

অল ইউরোপিয়ান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন