এবার বৈশ্বিক ইউনিয়ন গঠনের পথে গুগল কর্মীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

গুগলের বৈশ্বিক কর্মীবাহিনীর সদস্যরা মিলে এবার শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র কানাডা কার্যালয়ের জন্য একটি শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেছে সার্চ জায়ান্ট গুগল প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এবার নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা কার্যালয়ের জন্য নয়, বৈশ্বিক কর্মীবাহিনীকে নিয়ে ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।

কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী সব শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট মহামারীতে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন-ভাতা কমানো হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জোটবদ্ধ থাকার প্রয়াস থেকে যুক্তরাষ্ট্র কানাডার গুগল কর্মীরা কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেছিলেন। এবার দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বজুড়ে থাকা অসংখ্য গুগল কর্মীর স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিক শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউনিয়নবিরোধী হিসেবে পরিচিত সিলিকন ভ্যালিতে গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ইউনিয়ন গঠনের ঘটনা বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের ঘটনা খুবই বিরল। এর আগে সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোতে কর্মরত শ্বেতাঙ্গ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই ছাতার নিচে আনার চেষ্টা হলেও তা বিশেষ সাফল্য পায়নি। বেতন, উচ্চপদস্থদের দ্বারা সাধারণ কর্মীদের হেনস্থা এবং নীতিগত ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ পলিসি পরিবর্তনের দাবিতে সাম্প্রতিক সময় একাধিকবার গুগল কর্মীদের একাংশকে সরব হতে দেখা গেছে। নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র কানাডার জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন এবং সর্বোপরি বৈশ্বিক শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের ঘটনা সে তিক্ততা আরো বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে গুগলের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের নাম অনুসারে প্রথম গঠিত শ্রমিক ইউনিয়নের নাম রাখা হয়েছিল অ্যালফাবেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। শুরুতেই ইউনিয়নে নাম লিখিয়েছিলেন গুগলের আডাইশর বেশি কর্মী। এর মধ্যে আছেন বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত ডিসেম্বরে নিজেদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করেন কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্র কানাডায় টেলিকম এবং মিডিয়া কর্মীদের জাতীয় স্তরের সংগঠন কমিউনিকেশন ওয়ার্কার্স অব আমেরিকার অনুমোদন পেয়েছে গুগল কর্মীদের প্রথম ইউনিয়ন।

প্রথাগত ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে অ্যালফাবেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কর্মপদ্ধতিতে একটি বুনিয়াদি পার্থক্য আছে। প্রথাগত ট্রেড ইউনিয়নগুলো বিভিন্ন দাবি মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে দর কষাকষি করে। কিন্তু সে ভূমিকায় দেখা যাবে না এরই মধ্যে আত্মপ্রকাশ করা গুগল শ্রমিক ইউনিয়নকে। এর মূল কারণ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের একটা ক্ষুদ্র অংশ ইউনিয়নে জড়িত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দরকষাকষির মতো জায়গায় পৌঁছাতে এবার বৈশ্বিক ইউনিয়ন গঠনের পথে এগোচ্ছেন গুগল কর্মীরা।

গুগল কর্মীদের দাবি, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক অনুশীলন এবং অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের মতো ইস্যুগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশে কর্মীদের আরো বেশি ক্ষমতা দিতে হবে। যে কারণে তারা অভ্যন্তরীণ শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল, যা কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। এবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় বৈশ্বিক শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করতে যাচ্ছে।

টানা কয়েক বছর ধরে নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে গুগল। কর্মী বাহিনীতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং মানবাধিকার নীতি-নৈতিকতা বর্জন করে একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়ায় খোদ কর্মীদের দ্বারাই সমালোচিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুগলের বৈশ্বিক কর্মীবাহিনী ধর্মঘটও পালন করেছে।

এর আগে গুগলের বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের সব কর্মীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়ে গুগলের পিপল অপারেশন বিভাগের পরিচালক কারা সিলভারস্টেইন বলেন, আমরা কর্মীবাহিনীর জন্য বরাবরই একটি সহায়ক এবং ফলপ্রসূ কর্মপরিবেশ তৈরিতে কঠোর পরিশ্রম করে আসছি। গুগল কর্মীদের শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা কর্মীদের উদ্যোগটিকে সমর্থন জানাই।

টিমিট গেব্রু নামে সম্প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ এক নারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষককে চাকরিচ্যুত করে তোপের মুখে পড়েছিল গুগল। ওই গবেষককে চাকরিচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে সার্চ জায়ান্টটির কাছে ১২ শতাধিক কর্মী এবং ১৫ শতাধিক গবেষক প্রতিবাদে নেমেছিরলন। ওই ঘটনার পর গুগল কর্মীদের প্রথম ইউনিয়নের ঘোষণা সামনে আসে। এবার বৈশ্বিক শ্রমিক ইউনিয়নের ঘোষণা এল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন