দেশের প্রথম স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের বাণিজ্যিক উৎপাদন এ বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটির ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে কেপিসিএলের কাছে। পটুয়াখালীতে অবস্থিত এইচএফওভিত্তিক ১৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্রটির সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি)।
ইউনাইটেড পায়রা বিদ্যুেকন্দ্রের উৎপাদন শুরুর বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে কেপিসিএল। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ারের ৩৫ শতাংশ শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির পর্ষদ। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের জানুয়ারিতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় বিদ্যুেকন্দ্রটির শেয়ার কিনে নেয় কেপিসিএল।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কেপিসিএলের আয় হয়েছে ৫২১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের বছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৮৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। মূলত খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত ১১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক কেপিসিএল-১ বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুেকন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে কোম্পানিটির আয় কমে গেছে। আর চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-আগস্ট) কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১৯৫ কোটি টাকা।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৩৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কেপিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরে ছিল ১৩৯ কোটি টাকা। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। আগের হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৫০ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৯১ পয়সা, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১১ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৫১ পয়সায়।
১৯৯৭ সালে দেশের প্রথম আইপিপি হিসেবে কেপিসিএলের যাত্রা শুরু হয়। বিদ্যুেকন্দ্রটি পুঁজিবাজারে আসে ২০১০ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৮০। এর মধ্যে করপোরেট উদ্যোক্তা পরিচালক ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) কাছে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, সামিট পাওয়ার লিমিটেডের কাছে রয়েছে ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং সামিট করপোরেশন লিমিটেডের কাছে রয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শেয়ার। তাছাড়া ১৪ জন ব্যক্তি উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এর বাইরে ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশী দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার কেপিসিএলের শেয়ার সর্বশেষ ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৪০ টাকা ২০ পয়সা ও ৬১ টাকা।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১৩ দশমিক ৭১, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ১২ দশমিক ৮।
প্রসঙ্গত, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত ১১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক কেপিসিএল-১ বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুেকন্দ্রটির উৎপাদন ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হলেও বিপিডিবি সেটি গ্রহণ করেনি। বর্তমানে কেন্দ্রটির সম্পদ বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছে কোম্পানিটি। এ অবস্থায় কোম্পানিটিকে ব্যবসায়িকভাবে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে এর অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক ইউনাইটেড গ্রুপ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার প্লান্টের ৩৫ শতাংশ শেয়ার কেপিসিএলের কাছে বিক্রি করা হয়। কেপিসিএলের খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত ১১৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক কেপিসিএল-২ বিদ্যুেকন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ৩১ মে। আর যশোরের নোয়াপাড়ায় অবস্থিত ৪০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক কেপিসিএল-৩ বিদ্যুেকন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ২৮ মে। কেন্দ্র দুটির মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে কোম্পানির সঙ্গে সরকার ও বিপিডিবির আলোচনা চলছে।