সিপিডির সংলাপ

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কভিডকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীতে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। মহামারীতে দেশের অর্থনীতির সব খাতে যে আঘাত লেগেছে, তা থেকে বের হতে অন্তত দুই বছর লেগে যেতে পারে। তবে সময়ের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সুস্পষ্ট কোনো নীতি বা পদক্ষেপ নেয়া হয়নি খসড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংলাপে অভিযোগ করেন বক্তারা। সেই সঙ্গে কভিড-১৯ মোকাবেলায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: কভিড-১৯ এবং টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, কভিডের মতো এত বড় দুর্যোগ থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় কিছু নেই। এসডিজি অর্জনেও সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই এতে।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক . আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়ছে না, অথচ প্রবৃদ্ধি বাড়ছেএর রহস্য কী। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেক সংস্কার উদ্যোগ ছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এবার কভিডের পরিপ্রেক্ষিতে পুরনোসহ আরো নতুন নতুন ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগ প্রয়োজন।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, কভিডের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দু-তিন বছর লাগতে পারে। পুনরুদ্ধারে সরকারের বিভিন্ন নীতি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মনিটরিং এবং মূল্যায়ন বাড়াতে হবে।

ষষ্ঠ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য সরকারের সিনিয়র সচিব . শামসুল আলম। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও তিনি প্রণয়ন করছেন। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুস্পষ্ট নীতি নেই, এমন সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমি ক্ষোভের সঙ্গেই বলছি

খসড়াটি আগে পড়ুন, তারপর সমালোচনা করুন। অষ্টম পরিকল্পনায় কভিডকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি বক্তব্য সঠিক নয়। কভিডকে গুরুত্ব দিয়েই সাজানো হয়েছে। বেসরকারি খাত থেকে ৮১ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এতে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে পর্যায়ক্রমে থেকে বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি কমতে পারে। এসব বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। পদক্ষেপ আছে।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার অনেক ভালো ভালো পরিকল্পনা নিয়েছে। বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আরো উন্নয়নের সুযোগ আছে। সেটা তারা আমরা অস্বীকার করি না। তবে দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রশংসা করলে সরকার আরো উৎসাহিত হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন একটা বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সরকার এবং জাতীয় সংসদকে অবগত করতে পারে। যাতে সংসদে বিষয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আর প্রশ্ন না ওঠে। এছাড়া প্রত্যেক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন প্রয়োজন। এতে বাকি দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আগে এই রীতি ছিল, এখন আর নেই।

ভার্চুয়াল সংলাপে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ . জাহিদ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন