আর্থ-সামাজিক নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত উপকূলীয় জেলে পরিবারের নারীরা

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করলেও, উপকূলীয় জেলে পরিবারের নারী সদস্যরা এখনো ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় ভীষণভাবে পিছিয়ে রয়েছেন। আজ রবিবার বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য তুলে ধরে। 

কোস্ট ট্রাস্ট উপকূলীয় তিনটি জেলা কক্সবাজার, ভোলা এবং বাগেরহাটের ৪টি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১২০০ জেলে পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বিশেষ সমীক্ষা পরিচালনা করে। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘উপকূলীয় মৎস্য খাতে নারীর অবদানের স্বীকৃতি প্রয়োজন: আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত জেলে পরিবারের নারীবৃন্দ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষাটির সংক্ষিপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। 

কোস্ট ট্রাস্টের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, সমীক্ষার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম। এতে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী সালেহা ইসলাম শান্তনা এবং কোস্ট ট্রাস্টের যুগ্ম পরিচালক মো. মজিবুল জক মনির। 

সমীক্ষার সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করতে গিয়ে জহিরুল ইসলাম জানান, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী শ্রমিকদের সবাই পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় দৈনিক প্রায় ২৫ শতাংশ কম মজুরি পাচ্ছেন। সম্পদ কেনাকাটায় জেলে পরিবারের ৩১ শতাংশ নারীরই কোনও মতামত গ্রহণ করা হয় না, পরিবারের সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ নারী সদস্যরেই কোনও মতামত নেওয়া হয় না। অন্যদিকে জেলে পরিবারের মাত্র ২ শতাংশ নারী সদস্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কোনও বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন এবং সমাজের কোন সালিশে বা অন্য কোনও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জেলে পরিবারের ৮২ শতাংশ নারীই কোনওদিন কোনভাবে অংশ গ্রহণ করেননি। তাছাড়া জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের ৬৫ শতাংশ কোনও না কোনও সহিংসতার শিকার এবং পুরুষ সদস্য মাছ ধরতে বাড়ির বাইরে থাকলে তাদের প্রায় সবাই আতংকে থাকেন। 

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, উপকূলীয় জেলেরা যখন মাছ ধরতে সমুদ্রে চলে যান, যখন পরিবারের নারী সদস্যটিকে একটানা কয়েকদিন পুরো সংসারটি সামলানোর দায়িত্ব পালন করতে হয়। নারীর এই কাজগুলো বেশিরভাগই অর্থের বিনিময় মূল্য দিয়েই বিবেচনা করা হয় না। এ জন্য এই খাতে নারীর অবদানটির এখনো কাক্সিক্ষত রকম স্বীকৃতি নেই। বদরুল আলম বলেন,  মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্তদের ১০-১২ শতাংশই নারী, কিন্তু  তাদের অবদানের আলাদা কোনও তথ্য নেই, এই বিষয়ে উদ্যোগ প্রয়োজন। সালেহা ইসলাম শান্তনা বলেন, শ্রম আইনে নারী-পুরুষের বৈষম্য না থাকলেও, নারী জেলেরা স্পষ্ট বৈষম্যের শিকার। কঠোর আইন প্রয়োজন। 

সনত কুমার ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ থেকে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষে বিশ্বে ৫ম, নারীর অংশগ্রহণ এক্ষেত্রে স্বীকৃত হলে আমাদের এই অর্জন টেকসই করা সহজ হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো: মৎস্য খাতে নারীর অবদান চিহ্নিত করতে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন, জেলে পরিবারের নারী সদস্যদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা, মৎস্যখাত সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত, মৎস্যশ্রমিকদের জন্য শ্রম নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন