গবেষকদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সময় এসেছে

ম্যারি টি ব্যাসেট

চলমান এই কভিড-১৯ মহামারীতে অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতো আমাকেও মানুষকে মাস্ক পরতে, বাইরে দেখা করতে, হাত ধোয়ার জন্য, দূরত্ব মেনে চলতে, বাড়িতে থাকতে, লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে এবং কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে অংশ নিতে বলতে হয়েছে। কারা সংক্রমিত হতে পারে, কে মারা যেতে পারে কেউ কীভাবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে ইত্যাদি বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারে এমন ব্যক্তিগত ঝুঁকির কারণগুলো নিয়ে কাজ করি। তবে আরো উন্নত ন্যায়সংগত স্বাস্থ্যের জন্য জনস্বাস্থ্য স্বাস্থ্যযত্নের নীতিগুলো কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে আমরা ভাবি না। এগুলো আমরা আমাদের আওতার বাইরের বিষয় মনে করি। কিন্তু এখন গবেষকদের ট্র্যাক পরিবর্তন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সময় এসেছে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেশ উন্নত। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু এটা এখন আর গোপন নেই যে নিজেদের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং রাজনীতির বাইরে থেকে মার্কিন গবেষকরা অজান্তেই কভিড-১৯-এর উন্মুক্ত মহাসড়ক প্রশস্ত করতে সহায়তা করেছিলেন।

রাজনীতিমুক্ত ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রেসিডেন্টরা বিজ্ঞানের ওপর ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য প্রকাশ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ধরনের বৃহত্তর সামাজিক ইস্যুতে গবেষকরা নীরব থাকেন। এটা ভালো বিজ্ঞানের ক্ষতি ডেকে আনলেও নিরাপদ বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারে সহায়তা করে থাকে। এই মহামারী ভালো বিজ্ঞান কীভাবে জীবন বাঁচাতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

জীবন বাঁচানের ক্ষেত্রে আমেরিকা পরাজিত হয়েছে। কভিডে বিশ্বজুড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ধনী সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যদিও বিশ্বের তুলনায় দেশটির জনসংখ্যা শতাংশেরও কম। আবার বয়স, মৃত্যুর হার বিবেচনায় নিলে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায়

কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো নেটিভ আমেরিকানদের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশি। বিষয়টি নিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী, কেউ কেউ প্রথমবারের মতো অব্যক্ত নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতা বিজ্ঞানের ওপর তার আক্রমণের সমালোচনা করেছেন।

খুব কম গবেষক বর্ণবাদীর বিষয়ে ন্যায়বিচারের জন্য অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কাজ করছেন। যদিও অনেকে ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাবের ভয়ে এগুলো এড়িয়ে চলেন। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক স্বাস্থ্য কমিশনার হিসেবে আমি আশা করি, বিজ্ঞানীরা নতুন রাজনৈতিক জাগরণে অংশ নেবেন। এতে অ্যাক্টিভিস্ট তকমা লাগবে এবং এটাতে সম্মানিত হওয়া উচিত, গ্লানি বা তিরস্কার নয়।

কারণে আমার নেতৃত্ব দেয়া কেমব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএক্সবি সেন্টার ফর হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাটালিয়া লিনোসের কল পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। তিনি ম্যাসাচুসেটসের একটি শূন্য কংগ্রেশনাল আসনে প্রার্থী হতে চান। মহামারীর মাঝামাঝি সময়ে তিনি অনুভব করেছিলেন যে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিজ্ঞানের ওপর আক্রমণ ধ্বংসাত্মক জাতীয় ব্যবস্থাপনার কারণে তার মতো দক্ষতাসম্পন্ন লোকদের পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়নি। তবে তিনি ঠিক বলেছেন যে আমাদের রাজনীতিতে আরো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন। কেউ কেউ মনে করবেন, বিজ্ঞানীরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক প্রার্থীদের হতাশ করবেন। যদিও এটা বোধগম্য যে রাজনীতিতে বৈজ্ঞানিক দক্ষতার উপস্থিতি সাধারণভাবে জনসাধারণের পাশাপাশি সব নেতাকে বিজ্ঞান বোঝার বিষয়টির উন্নতি করবে।

জার্মানি তাইওয়ান এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে পরিচালিত দেশ দুটি মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এজন্য আমার আরো নির্বাচিত আধিকারিক প্রয়োজন এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন এমন পদক্ষেপ নেয় তখন উৎসাহ দেয়া উচিত।

আসুন আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা প্রয়োগ করি। আমি বলছি না যে বিজ্ঞানের একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা আমাদের সামগ্রিক বিশেষজ্ঞ করে তোলে। কিন্তু যখন কাঠামোগত বর্ণবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন বা আয়ের বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোতে আমরা চুপ থাকি এবং এগুলোকে নিজেদের আওতার বাইরের বিষয় মনে করি, তখন আমাদের পেশার খ্যাতি আমরা যে সেবা দিচ্ছি উভয় বিষয়েই বিশ্বাসঘাতকতা করি।

দ্য নেচার থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন