বাগেরহাট জেলা

অর্জিত হয়নি বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বাগেরহাট

বাগেরহাটে সরকারিভাবে বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট (গতকাল) পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় জেলা খাদ্য বিভাগ। বোরো ধান সংগ্রহের সরকারি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর নিয়মের কারণে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি প্রান্তিক কৃষকরা। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করেছেন।

তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি মূল্যে ধান বিক্রিতে উৎসাহ দেখাননি কৃষকরা।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট থেকে সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে হাজার ৪১৮ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ধান সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সময়ের মধ্যে বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ৪৩৯ দশমিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। শতকরা হিসেবে অর্জনের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ। একই সময়ে সিদ্ধ চাল আতপ চালও সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহ না হলেও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হাজার ৭৯২ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে হাজার ৪৪৪ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ৪৮৮ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৪২৬ টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে লাখ ৪৫ হাজার ৩৭০ টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, বিভিন্ন গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অসহযোগিতা খাদ্য বিভাগের নানা নিয়ম-কানুনের কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা। খাদ্য বিভাগ স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকার কথা বললেও কৃষক ধান ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয় বাজারে ধানের দাম অনেক কম ছিল।

বাধাল বাজারের ধান ব্যবসায়ী কৃষক মোহাম্মাদ আলী বলেন, মে মাসের প্রথম থেকে জুন পর্যন্ত ধানের দাম ছিল ৬০০-৭৫০ টাকা। পরবর্তী সময়ে ৭৫০-৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সরকারি দাম তো হাজার ৪০ টাকা মণ। সরকারি ধান ক্রয়ের পদ্ধতি সহজ করা হলে কৃষকরা ধান দিতে বেশি উৎসাহ পাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কচুয়া উপজেলার একজন কৃষক বলেন, আমার কৃষি কার্ড রয়েছে। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বললেন, আপনারা ধান বিক্রি করতে চাইলে কৃষি কার্ড দিয়ে আবেদন করুন। আমি উপসহকারী স্যারের কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করলাম। কিন্তু পরে খাদ্যগুদামে খোঁজ নিতে গেলাম। সেখানে জানতে চাইলে বলল, আমার নাম লটারিতে বাঁধে নেই। পরে অনেক কষ্টের উৎপাদিত ধান বাজারে ৭৫০ টাকা মণে বিক্রি করেছি।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, বছর করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। ফলে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে উৎসাহ দেখাননি। তাই বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে সরকারের চাওয়া হচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করা। সেটা খোলা বাজারে পেলে কোনো সমস্যা নেই। কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতেই হবে এমন কোনো বাধ্যাবাধকতা নেই। তবে আমরা চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ক্ষেত্রে অর্জন করতে পেরেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন