আইসিবিকে সংস্কারের উদ্যোগ

স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের স্বার্থেই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন

দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন সময়ে আইসিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় ভরসার জায়গা আইসিবি। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানো, ইকুইটি হিসেবে অর্থ বিতরণ, মার্জিন ঋণ বিতরণ আদায় এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে আইসিবি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তবে প্রকল্প ঋণ বিতরণ মিউচুয়াল ফান্ড সার্টিফিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে সংস্থাটির অর্জন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক। ক্রমেই পুঁজিবাজারে আধিপত্য হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে তারল্য সংকটের কারণে কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না আইসিবি। পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সূচকে সংস্থাটির অর্জন সন্তোষজনক নয়, সেসব ক্ষেত্রে আগামীতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে আইসিবিকে নির্দেশ দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

অনেক ক্ষেত্রেই আইসিবি যেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে, সেগুলোর পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রয়েছে এবং লক-ইন থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সেসব কোম্পানির শেয়ারও বিক্রি করতে পারছে না। এতে আইসিবির পোর্টফোলিওর মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। আইসিবিকে মূলধন সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ভর্তুকি দেয়া হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিএসইসির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, আইসিবিকে ভর্তুকি দেয়া সঠিক হবে কিনা, মুহূর্তে সরকারকে এটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আর আইসিবির সার্বিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ, পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ম্যান্ডেট অনুসারে যেসব কাজ করেছে সেগুলোর তালিকা তৈরি, বর্তমানে পুঁজিবাজারে আইসিবির ভূমিকা, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক -আর্থিক সম্পদের অবস্থা, এর সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক আইনি কাঠামো, জনবল সক্ষমতার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশে ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায়োগিকতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে আইসিবিকে মূল্যায়ন করা সম্ভব।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মুদ্রাবাজার থেকে পরিবর্তনশীল সুদহারে সংগৃহীত তহবিলের ওপর নির্ভরশীলতা এবং পর্যাপ্ত তহবিল প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা, স্বল্পমেয়াদে তহবিল সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ফলে সংস্থার তহবিল ব্যয় সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়া, বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ অনাদায়ী থাকা সংস্থাটির প্রধান সমস্যা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া প্রয়োজনীয় লোকবল দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং সরকারের পক্ষ থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানা যায়। আইসিবি সংস্কারের উদ্যোগটির সুফল নির্ভর করছে সুপারিশের বাস্তবায়নের ওপর। সংস্থাটির অন্যতম কাজ ছিল পুঁজিবাজারকে বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা করা। এটি করতে গিয়ে সরকারের পরামর্শে আইসিবি বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে গড়ে তুলতে বেশকিছু সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সরকারের বিভিন্ন সময়ে দেয়া ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আইসিবির। তাদের অদক্ষতার কারণেও অনেক সময় এসব ফান্ড থেকে সুফল মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইসিবির সংস্কারের লক্ষ্যে নেয়া উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সংস্কারের লক্ষ্যে সঠিক ব্যক্তির নেতৃত্বে উপযুক্ত কমিটি গঠন একান্ত অপরিহার্য। সর্বোপরি প্রয়োজন সুপারিশের কার্যকর বাস্তবায়ন। আমরা আইসিবিকে পুঁজিবাজারের জন্য কার্যকর শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন