যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের এক তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারীর বয়সই ১৪ বছরের কম

বণিক বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে চীনের মালিকানাধীন টিকটক অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তার আগেই যদি মাইক্রোসফট বা অন্য কোনো সংস্থা অ্যাপটি কিনে নেয় তাহলে নিবেদিতপ্রাণ ভক্তদের একটি বিশাল সম্প্রদায় এবং বিজ্ঞাপন বিক্রির একটি লাভজনক প্লাটফর্ম অটুট থাকবে। পাশাপাশি এটার সঙ্গে অন্য একটি বিশেষ জিনিসও কেনা হতে পারে; ১৪ বছর বা তার কম বয়সী একটি বিশাল জনসংখ্যা। যদিও টিকটক ব্যবহারের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর।

সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ ডাটা ও নথি পর্যালোচনা করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। সেখানে দেখা গেছে, জুলাইয়ে টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে তার দৈনিক ৪৯ মিলিয়ন (৪ কোটি ৯০ লাখ) ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ১৪ বছর বা তার চেয়েও কম বয়সী। যদিও এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে কিছু সম্ভবত ১৩ বা ১৪ বছর বয়সী হতে পারে। টিকটকের সাবেক একজন কর্মী বলেছেন, টিকটক কর্মীরা এর আগে আরো কম বয়সী শিশুদের ভিডিওগুলো দেখেছিলেন, যেগুলো কেবল এক সপ্তাহের জন্য অনলাইনে থাকার অনুমতি পেয়েছিল। 

সুতরাং টিকটক ব্যবহারকারী ১৩ বছরেরও কম বয়সী হতে পারে, তাদের সুরক্ষা দিতে সংস্থাটি যথেষ্ট করছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের শিশুর অনলাইন গোপনীয়তা সুরক্ষা আইনে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের আগে তার বাবা-মায়ের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৮ সালে টিকটকের সঙ্গে একীভূত হওয়া অ্যাপ মিউজিক্যালির অপারেটররা এই নিয়ম ভঙ্গ করায় ৫৭ লাখ ডলার জরিমানা দিয়েছিল। 

তবে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অল্প বয়স্ক ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির একজন প্রতিনিধি তাদের অ্যাপটিতে কিশোর-কিশোরীরা কী দেখবে এবং তারা কতটা সময় ব্যয় করতে পারে- তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো ব্যবস্থাগুলোর উল্লেখ করেছেন। 

টিকটক এবং এর মালিক প্রতিষ্ঠান চীনা সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট বাইটড্যান্স ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগ, অ্যাপ্লিকেশনটি ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে আমেরিকানদের ব্যক্তিগত তথ্য পেতে সহায়তা করে থাকতে পারে। 

চলতি মাসে ট্রাম্প সুরক্ষার আশঙ্কা প্রশমিত করার উপায় হিসেবে মাইক্রোসফট বা অন্য কোনো আমেরিকান সংস্থার কাছে টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রির পক্ষে তার অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। 

তবে টিকটকের সঙ্গে যে কোনো চুক্তির জন্য ক্রেতাদের কেবল রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে লড়াই করা নয়, কন্টেন্ট গাইডলাইন, তথ্য সংগ্রহের অনুশীলন এবং শিশুদের সুরক্ষাসহ আরো নানা বিষয়ে লড়াই করতে হবে। অ্যাপ্লিকেশনটির ব্যবহারকারী বিশাল তরুণ সম্প্রদায়, এই গ্রাহকভিত্তি অ্যাপটিকে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে। কিন্তু টিকটকের গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে। 

টিকটক অ্যাপে নিবন্ধনের সময় ব্যবহারকারীকে জন্মতারিখ দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যারা ১৩ বছরের কম বয়সী অ্যাপটিতে তারা ব্যক্তিগত তথ্য বা ভিডিও শেয়ার করতে পারবেন না। কেবল তাদের ফায়ারওয়ালযুক্ত একটি মোড ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। তারপরও উদ্বেগ হলো, কিছু ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট খোলার সময় মিথ্যা বলতে পারেন এবং অ্যাপটি সেই ব্যবহারকারীদের অভিভাবকদের কাছে থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি পাচ্ছে না। 

সম্প্রতি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস টিকটকের জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, টিকটক যে কোনো ক্রেতার কাছে একটি ‘বিষের বোতল’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবসায় বড় হওয়া সাধারণ কোনো খেলা নয়। 

দ্য টাইমসের বিশ্লেষণ করা টিকটকের তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনের ১৪ বা তার চেয়ে কম বয়সী ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ। এটা ১৪ বছরের বেশি বয়সী ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২ কোটির মতো। বাকি ১ কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারীর বয়স অজানা হিসেবে শ্রেণিবন্ধ করা হয়েছিল। 

টিকটকের দুইজন সাবেক ও একজন বর্তমান কর্মচারী বলেন, বয়স শ্রেণীবদ্ধ করতে টিকটক কেবল ব্যবহারীদের দেয়া জন্মতারিখের ওপর নির্ভর করে না। প্রোফাইলের ছবি ও ভিডিওগুলো যাচাই-বাছাই করতে অ্যালগোরিদমসহ অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের বয়সের অনুমান করে। এছাড়া অ্যাপে তাদের ক্রিয়াকলাপ ও সামাজিক যোগাযোগগুলো ইতোমধ্যে অনুমিত ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তুলনা করে যাচাই করে।

নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন