অদৃশ্য অ্যান্টিবডি ও শক্তিশালী টি-সেলের গল্প

নারিন্দার কুমার মেহরা

কভিড-১৯ মহামারী চূড়া স্পর্শ করার সঙ্গে বৈশ্বিকভাবে ১৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এতে সংক্রমিত হয়েছে এবং প্রায় ছয় লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এটা স্পষ্ট যে সংক্রমণের ঝুঁকি জনগণের মাঝে অভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যেকে জানতে চায়, উপসর্গহীন এবং সেরে ওঠাদের অ্যান্টিবডির বিকাশ এটা প্রমাণ করে কিনা যে তারা ভাইরাস থেকে নিরাপদ। এরা কি পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে এবং যদি তা হয় তবে সেটা কি মৃদু হবে নাকি আরো অনেক তীব্র হতে পারে?

গত সপ্তাহের তিনটি গবেষণা সাধারণভাবে করোনাভাইরাসগুলোতে হোস্ট ইমিউনিটি, বিশেষ করে সার্স-কোভ--এর জড়িত থাকার বোঝাপড়াকে উন্নত করেছে। কিংস কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ৯০ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর ৬০ শতাংশের মাঝেই উপসর্গ দেখা যাওয়ার তিন সপ্তাহ পর শক্তিশালী অ্যান্টিবডি দেখা গেছে। অথচ এটি তিন সপ্তাহ পর ১৭ শতাংশে নেমে আসে। এমনকি অনেকের মাঝেই অ্যান্টিবডির কোনো চিহ্নও পাওয়া যায়নি।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণের ৯০ দিন পর অ্যান্টিবডি হ্রাস পেয়েছে ২৩ গুণ পর্যন্ত। এই পর্যবেক্ষণ যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে তা হলো থেরাপির জন্য কনভালেসেন্ট প্লাজমা প্রাপ্তির সেরা সময় হতে পারে উপসর্গ দেখা দেয়ার চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে। অ্যান্টিবডির ইমিউনটি হ্রাসের একই পর্যবেক্ষণগুলো একটি স্প্যানিশ গবেষণায়ও দেখা গেছে, যেখানে যুক্ত ছিল ৭০ হাজার মানুষ। অন্তত ১৪ শতাংশ রোগী যারা পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হয়েছিল; ইমিউনিটি হারানোর ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল, যাদের মাঝে কখনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এই পর্যবেক্ষণগুলো স্বল্প মধ্যবর্তী মেয়াদে ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

হারিয়ে যাওয়া এই অ্যান্টিবডি মনে করিয়ে দেয় যে তাদের উপস্থিতি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় না। এই পর্যবেক্ষণ জার্মানি চীনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সে সঙ্গে সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠাদের দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটির যে প্রত্যাশা তাকে হ্রাস করে। এছাড়া ভ্যাকসিনের বিকাশ এবং পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার প্রশ্নে এর প্রভাব রয়েছে।  

অ্যান্টিবডির হ্রাস কি এটা বোঝায় যে সেই ব্যক্তির আর ইমিউনিটি নেই? ঘাতক টি-সেল জড়িত কোষ-মধ্যস্থ ইমিউনিটিরই বা কী হবে, যা প্রায়ই ইমিউন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত? এই কোষগুলো সংক্রমিত কোষ মারার ক্ষমতার কারণে, ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানুষের ইমিউন প্রতিক্রিয়ার অংশ। এখন পর্যন্ত সার্স-কোভ--এর বিরুদ্ধে ইমিউনিটির ক্ষেত্রে টি-সেলের জড়িত থাকার বিষয়ে আমাদের খুব সীমিত ধারণা ছিল, কিন্তু এটা সম্ভব যে এই কোষ সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি টি-সেলের প্রতিক্রিয়াকে ইমিউনিটির সূচক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি কিনা?

সার্স-কোভ--এর ইমিউনিটির একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো সংখ্যক নন-এক্সপোজড ব্যক্তির সম্ভবত এরই মধ্যে ইমিউনিটি আছে আগের করোনাভাইরাসের কারণে, এখন পর্যন্ত মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে এমন অন্তত ছয়টি করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানা গেছে। এর মাঝে চারটি স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলাফল সাধারণ সর্দি-জ্বর। যেখানে ২০০৩ ২০১৭ সালে অন্য দুটি সার্স-কোভ- এবং মার্স-কোভ নিউমোনিয়াজনিত সীমিত আকারের মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সম্প্রতি নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দুটি পয়েন্ট দেখা গেছে: এক, অ্যান্টিবডিকে নিউট্রোলাইজ করার পাশাপাশি কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীর মাঝে সার্স-কোভ--এর নির্দিষ্ট টি-সেলের উপস্থিতি রয়েছে, যা কিনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দ্বিতীয়ত, ২০০৩ সালের প্রাদুর্ভাবের ১৭ বছর পরও সেরে ওঠা রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী টি-সেল রয়েছে, সা সার্স-কোভ--এর ক্রস ইমিউনিটি প্রদর্শন করছে। এই আবিষ্কার প্রতিশ্রুতিশীল কারণ অন্য গবেষণাগুলোও যা বলছে তা হলো, হয়তো অ্যান্টিবডি কয়েক মাসের মাঝে বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে কিন্তু টি-সেলের সুরক্ষিত বাহিনীগুলো বছরের পর বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে।

এর আগে দক্ষিণ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল সার্স-কোভ-১। যাকে পরে হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটা সম্ভব যে চীনের অনেক জনগণ এই সার্স-কোভ- ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল, যারা এখন দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটর ফল ভোগ করছে এবং বর্তমান মহামারী থেকে রক্ষা পেয়েছে।

সিঙ্গাপুরের গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাস মহামারী টি-সেল এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিকে চালিত করে। সুখবর আসছে অক্সফোর্ড থেকেও, যারা মানবদেহে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। সেখানে যে ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভবত ডাবল ডিফেন্স প্রদান করে। এটি শরীরের অ্যান্টিবডি এবং ঘাতক টি-সেল উভয়ের উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।

এটা উৎসাহব্যঞ্জক যে কেবল কয়েক মাসে কভিড-১৯-এর ইমিউনিটি নিয়ে হাজারো গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে উপসর্গহীন উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা কি একই রকম নাকি ভিন্ন ধরনের ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখায়।

হিন্দুস্তান টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন