পম্পেও-মোমেন ফোনালাপ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে দুই বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছতা তথ্যপ্রাপ্তিতে জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর আগামী দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক খাতের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুবিধা চায় বাংলাদেশ। গত সোমবার রাতে এক ফোনালাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল আর পম্পেও নিজ নিজ দেশের পক্ষে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মরগান অর্টাগাসের এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল আর পম্পেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় আমাদের অব্যাহত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। পম্পেও এবং মোমেন বাংলাদেশকে কভিড-১৯ মোকাবেলায় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া কোটি ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি সহায়তা পর্যালোচনা করার পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম তৈরি সরবরাহের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

মাইকেল পম্পেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে পর্যন্ত প্রায় ৮২ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে, যার বেশির ভাগই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচির জন্য। দুই নেতা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ টেকসই প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া তারা দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছতা তথ্যপ্রাপ্তির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন।

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ফোনালাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে সে দেশের আইডিএফসি ফান্ডের আওতায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিযোগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে চায় উল্লেখ করে . মোমেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনে যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগেরও অনুরোধ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের হাইটেক পার্ক, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল এবং বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের সহজলভ্যতার কারণে দেশে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।

. মোমেন পম্পেওকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে দুই বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল করায় খাতে কর্মরত শ্রমিকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন, যার অধিকাংশ নারী।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো দৃঢ় ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন . মোমেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে চুক্তির বাস্তবায়নে মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করছে। সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের বিষয়েও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত এনে তার শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।

. মোমেন আরো বলেন, করোনা মহামারী সারা পৃথিবীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সমস্যা মোকাবেলায় পৃথিবীর সব দেশের পারস্পরিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মানব পাচার রোধে টিআইপি (ট্রাফিকিং ইন পারসন) প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ধাপে উন্নয়নের প্রশংসা করেন। ফোনালাপে সর্বোপরি উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন