বিপর্যয় এড়াতে ১৫-২০ দিনে ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়াতে নতুন করে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ দিতে হবে- এমনটাই মনে করেন এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। এই ব্যবসায়ীর মতে, কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ ছুটির মতো বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য না দিয়ে একেবারে কঠিন একটা লকডাউন দিতে হবে। তারপর একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ আমাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ: রোডম্যাপ টু রিকভারি’ শিরোনামের একটি সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সংলাপ, গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (বিল্ড) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এই সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা করে।

আলোচনায় নিহাদ কবির বলেন, ‘আমরা এটাকে শুধু অর্থনীতির চোখে দেখছি না। আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, সবার আগে আমাদের দেশের সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় যারা আছেন তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করার পর আমরা আমাদের ব্যবসার দিকে তাকাব।

একই প্রস্তাব ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরের। তিনি বলেন, ‘কিছু দিনের জন্য যদি একটা কঠোর লকডাউন করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে অনেক বেশি লাভ হতে পারে। লকডাউন দিলে কঠোর লকডাউন দিতে হবে। যদি আবার একটা লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে এরমধ্যে বাস ট্রেন কিংবা সাধারণ মানুষের যাতায়াত অব্যাহত থাকে তাহলে কিন্তু হবে না।’

খুব শিগগিরই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিদেশী বিনিয়োগ হারানোরও শঙ্কা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সংক্রমণ বন্ধ করতে না পারি তাহলে চীন থেকে যেসব ব্যবসায়ী অন্য দেশে বিনিয়োগের দেশ খুঁজছে, তখন সেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসবে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে উল্টো আমাদের দেশ থেকে চীনা ও জাপানিরা চলে যেতে পারে।’

দেশে সরকারি অধিদপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশে বিশেষ করে সরকারি অধিদপ্তরগুলোর মধ্যেও সমন্বয় নেই।’ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে করোনা মোকাবেলা সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

তবে নতুন করে লকডাউন দিতে হলে  প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানোর ব্যাপারেও ভাবতে হবে বল মনে করেন সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তার মতে, এর আগে আসলে লকডাউন দেওয়া হয়নি, তা ছিল সাধারণ ছুটি। এখন নতুন করে লকডাউন দিতে হলে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কাছে কীভাবে খাবার পৌঁছাবেন তার একটা পরিকল্পনা করে যাওয়া দরকার।

বৈষম্য যাতে আরও বেড়ে না যায় তাও পরিকল্পনায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ব্যবসায়ী নেতা আবুল কাশেম বলেন, প্রতিটি দেশেরই করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রক্রিয়া ভিন্ন হবে। কারণ একেক দেশের মানুষের লাইফস্টাইল বা বসবাস একেক রকম হতে পারে। আমাদের দেশ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। তাই অন্য দেশের সঙ্গে মেলানো যাবে না। আমাদের সমস্যা আমরা কীভাবে মোকাবেলা করব তার জন্য সরকারি- বেসরকারি উভয়পক্ষকেই সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

আলোচনা সংলাপে উন্নয়ন গবেষক আহসান এইচ মনসুর, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন অংশ নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন