লকডাউনে কেমন আছেন নারী

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে পুরুষদেরই বেশি প্রাণহানি ঘটছে। এই মহামারীর শিকার নারীরা অপেক্ষাকৃত কম হলেও এর কারণে তাদের দুর্দশা ঠিকই বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে, তেমনি পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে আসায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। আনুপাতিকহারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগও নারীর কমে এসেছে। লকডাউন দেয়া হয়েছে মূলত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে, কিন্তু এটা নারীদের বেশ বিপাকেই ফেলেছে, কেননা মৌলিক অধিকারের জায়গাগুলো বেশ সীমিত হয়ে পড়েছে। 

অতীতে ইবোলা ও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ও যেসব এলাকায় এটি বেশি প্রকোপ দেখা যায় সেই এলাকার নারী ও কিশোরীরা বেশি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা করোনাকালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন।

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরপরই এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কভিড-১৯-এ নারীদের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি মারা যায় পুরুষ। কিন্তু এ অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুই স্বাস্থ্যের চিত্রটা দেখা আসলে বিপজ্জনক। কানাডার সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়া স্মিথ এ নিয়ে বলেন ‘আমরা সংকটটা দেখছি খুবই সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে, কিন্তু আসল চিত্রটা আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।’

মহামারীর বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে বহু-বছর মেয়াদি প্রকল্পে কাজ করা জুলিয়া আরো বলেন, ‘পুরুষরা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে খুবই নাজুক অবস্থায় চলে যায় তাদের স্বাস্থ্য, কিন্তু আমরা যদি আনুষঙ্গিক প্রভাবের কথা চিন্তা করি তবে দেখতে পাব, নারীরাও এখানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

এমনকি মহামারী শুরুর আগে নারীরা যেমন ছিলেন এখন তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন। দ্য সেন্টার ফর ফেমিনিস্ট ফরেন পলিসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিনা লুঞ্জ বলেন, ‘সমাজে যেমন অসমতা আগে থেকেই বিরাজ করে, এমন সংকটে তা আরো বেড়ে যায়। এই সময়ে উঠে আসে নারীর অধিকার, নারীর স্বাস্থ্য ও নারীর অর্থনৈতিক মর্যাদার প্রশ্ন, যা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

স্মিথ মনে করেন, যখন প্রান্তিক মানুষ কোথাও নীতি নির্ধারণকারী টেবিলে ঠাঁই পান না তখন তাদের অধিকার ও প্রয়োজনের বিষয়গুলোও উপেক্ষিত হয়। তার কথায়, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, যেকোনো সংকটকালে নারীর অধিকারের বিষয়টি সব সময়ই পরে ভাবা হয়।’

নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় অধিকাংশ দেশের সরকারই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে এবং জরুরি প্রয়োজন ব্যতিরেকে নাগরিকদের ধরেই অবস্থানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। হ্যাঁ, লকডাউন কঠোর করায় ভাইরাসের বিস্তার খানিকটা কমানো গেছে, তবে এর উদ্বেগজনক প্রভাবও রয়েছে: পারিবারিক সংহিসতা অনেক বেড়েছে।

অনেক মানবাধিকার কর্মী বলছেন, বিশ্বব্যাপী লকডাউনের সময় যে এমন কষ্টদায়ক নির্যাতন বেড়েছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অনেক সমীক্ষাই বলছে, অর্থনৈতিক মন্দা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বেড়ে যায়। বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ-এর ফেলো এলেনা মারবান কাস্ত্রো বলেন, ‘কল্পনা করুন, যেসব নারী এমন লকডাউনে পুরুষদের সঙ্গে রয়েছেন তাদের অনেকেই কতটা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই এ ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেছেন। তাদের অনেককেই পুলিশ বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিয়েও এসেছেন।’

তবে অধিকাংশ দেশই লকডাউনের মতো এমন ব্যবস্থা ঘোষণা করার সময় হয়তো আলাদাভাবে ঘরোয়া সহিংসতার বিষয়টি উল্লেখ করে না। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট এর জেন্ডার প্রোগ্রাম এর সহকারী পরিচালক মেগান ও’ডনেল এ নিয়ে বলেন, ‘সরকারের কোনো নীতি বাস্তবায়নের সময় এ বিষয়টি সর্বাগ্রে ও সহজাতভাবেই ভাবনায় রাখা উচিত। যখন আমরা মহামারীর ব্যাপারে প্রস্তুতি নেই তখন সম্মুখসারির অনেক স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি রাখি, অনেক প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট মজুদ করি এবং কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার বিষয়ে জোর দেই। ঠিক একইভাবে আমাদের ঘরোয়াভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা উচিত।’

সহিংসতা হচ্ছে বলেই কিছু দেশ ব্যবস্থাও নিচ্ছে। ফ্রান্স সরকার যেমন সহিংসতার শিকার নারীদের থাকতে হোটেলে ২০ হাজার নাইট সিটের ব্যবস্থা করেছে, সুপার মলে আবার কাউন্সেলিং সেন্টার খোলা হয়েছে। সহিংসতার ব্যাপারে পুলিশকে জানাতে নারীকে একটি কোড ব্যবহারের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। 

স্মিথ বলেন, ‘এসব নারী তো এরই মধ্যে সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। এটি যাতে আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

সিএনএন অবলম্বনে গাজী রাকিব

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন